সাত রানীর গল্প - রাধারানী দেবী

রূপবতী রানী সারাদিন রূপচর্চা নিয়ে কাটান। একজন দাসী তার কচি পল্লবের মতো নরম পা দুখানির সেবা করে। পায়ের রংয়ের সংগে রং মিলিয়ে গোলাপী আলতা পরায়, পায়

 সাত রানীর গল্প - রাধারানী দেবী 


এক দেশে এক রাজা বাস করতেন। রাজার সাত রানী। পাটরানী, রূপবতী রানী, গুণবতী রানী, বিদ্যাবতী রানী, সেবাবতী রানী আর সোহাগিনী রানী।

সাত রানীর কাহিনী—সাত রানীর যশ—দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে, বসন্তকালের বাতাসের মতন—নাগকেশর ফুলের গন্ধের মতন—শরৎকালের রৌদ্রের মতন।

রাজা শ্বেতপাথরের সাদা ধবধবে দেওয়ালে মণিমুক্তো-পান্না-পোখরাজের লতাপাতা-ফুল-পাখি-আঁকা সাতটি মহল রাজপুরীর মধ্যে তৈয়ার করে দিয়েছেন সাত রানীর জন্যে।

পাটরানী যিনি, তিনি ধীর স্থির গম্ভীর রাশভারী মানুষ। শান্ত প্রসন্ন মূর্তি, কিন্তু বেশি হাসেন না, বেশি কথা বলেন না। রাগ হলে কখনও বাইরে প্রকাশ করেন না। রাজামশায় শুদ্ধ তাঁকে সমীহ করে চলেন।

রূপবতী রানী—রূপের তার সীমা-পরিসীমা নেই। হাজারখানা চাদের জোছনা নিঙড়ে, কনকচাঁপা ফুলের পাপড়ি দিয়ে হালকা দেহখানি গড়া। চোখ দেখে পদ্মপাপড়ি পলাশ লজ্জা পায়। ঠোট দুখানি বাঁধুলি, নাকটি যেন তিলফুল। দাঁতগুলি সারবন্দী মুক্তো। আর আঙুলের নখ থেকে চুলের ডগা পর্যন্ত প্রত্যেকটির অঙ্গ নিখুঁত সুন্দর।

রূপবতী রানী সারাদিন রূপচর্চা নিয়ে কাটান। একজন দাসী তার কচি পল্লবের মতো নরম পা দুখানির সেবা করে। পায়ের রংয়ের সংগে রং মিলিয়ে গোলাপী আলতা পরায়, পায়ের নখ পালিশ করে পরশপাথর দিয়ে। আর একজন দাসী গায়ে রূপটান মাখায়। আমলকি-বাটা মাখায়। দুধের সর মাখিয়ে ডাবের জল দিয়ে ধুয়ে দেয়। তিনজন দাসী তার কেশের সেবা করে। একজন চুলে নানারকম সুগন্ধি তেল মাখায়, আর একজন সুরভি জলে চুল ধুয়ে অগুরু-ধূপের ধোয়ায় চুল শুকিয়ে তোলে। একজন শুধু বেণী রচনা করে—রকম-বেরকমের কবরী বাঁধে।

গুণবতী রানীর মহলে অহরহ কাজের সাড়া। গুণবতী রানী রাত্রিশেষে স্নান সেরে প্রাসাদশিখরে গালিচা পেতে বসেন। বীণাযন্ত্রে প্রতিদিন ভোরের রাগ-রাগিণী আলাপ করেন খোলা আকাশের নিচে। সে সুর শুনে গাছে-গাছে ঘুমভাঙা পাখিরা গান গেয়ে ওঠে। অন্ধকার আকাশ সুরের পরশে সাদা হয়ে আসে—সমস্ত পুবদিকটা সুরের আবীর-কুসুমে রাঙা টকটকে হয়ে ওঠে।

গুণবতী রানী শিল্পকাজ করেন। দেশ-বিদেশের শিল্পী-গুণীরা এসে শিল্পকর্ম দেখে ধন্য ধন্য করে যান।

রান্না করেন গুণবতী চৌষট্টি ব্যঞ্জন, পায়েস-পরমান্ন-পিঠা। নানা দেশের নানা রকমের —নানান স্বাদের রান্না। সে রান্না মুখে দিলে কেউ ভুলতে পারে না কোনদিন। বিদ্যাবতী রানীর মহলে দিনরাত শুধু বিদ্যাচর্চা। কতো দেশের—কতো জাতের—কতো ভাষার নানান আকারের পুঁথিতে মহল বোঝাই। চারদিকে শুধু বই আর পুঁথি। নানা দিগদেশের পণ্ডিতেরা এসে পর্দার আড়ালে বসা মহারানীর সঙ্গে শাস্ত্র আলোচনা করেন। রানীমা শুধু পড়ছেন আর লিখছেন সর্বদা। স্নানের খেয়াল নেই, আহারের খেয়াল নেই, ঘুমের খেয়াল নেই, বিশ্রামের খেয়াল নেই, তন্ময় হয়ে থাকেন পুথি-পত্তরের মাঝে।

বুদ্ধিমতী রানীর মহল পরিষ্কার ছিমছাম। তিনি সদা-সর্বদা নিজের মহলে থাকেন না। আর ছয় রানীর মহলে ঘুরে তাদের বিলিব্যবস্থা করতেই তার বেশির ভাগ সময় কেটে যায়। প্রতিদিন পাটরানীর মহলে গিয়ে তার সেবাযত্নের তদারক ক’রে তাকে প্রণাম ক’রে আসেন সকাল বেলায়। তারপরে যান রূপবতীর মহলে। রূপবতীর দাসীরা কাজকর্ম ঠিকমতো করছে কি না, কাচা হলুদগুলি কাচা-দুধে মিহি ক’রে বাটা হচ্ছে কি না, মুসুরডাল-বাটার সঙ্গে কুসুমফুল-বাটা সমান পরিমাণে মেশানো হচ্ছে কি না, চুলের সুরভি তেল বিশুদ্ধ আছে কি না, গন্ধদ্রব্যগুলি যত্ন ক'রে বন্ধ রাখা হয়েছে কি না—সমস্ত দেখে-শুনে, রূপবতীর কাছে কিছুক্ষণ হাসি-গল্প ক’রে যান গুণবতীর মহলে।

গুণবতীর সঙ্গীতের যন্ত্রগুলি যত্নে আছে কি না, ছবি আঁকার চিত্রশালা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রয়েছে কি না, সূচীশিল্পের কাজগুলির তালিকা তৈরি করে তুলে রাখা হয়েছে কি না, রন্ধনশালার পাত্রগুলি নিখুঁত পরিচ্ছন্ন আছে কি না—খোঁজখবর নিয়ে গুণবতীর সঙ্গে কিছুক্ষণ শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীত নিয়ে আলোচনা করে তারপর যান বিদ্যাবতীর মহলে।

বিদ্যাবতীর মহলে বেশ কিছু খাটতে হয় প্রতিদিন। বিদ্যাবতীর দৈনন্দিন কাজের, অর্থাৎ পাঠের ও রচনার হিসাব লেখা, রচনাগুলির পরের পর ক্রম-অনুসারে সাজিয়ে, গুণেগেঁথে তুলে দিয়ে আসেন সহকারিণীদের সাহায্যে।

তারপর যান সেবাবতীর মহলে। সে মহলে দাসী-চাকরাণী একটিও নেই। সেবাবতী নিজের গাতে সমস্ত কিছু করতে ভালবাসেন। মহারাজের পূজার আয়োজন, স্নানের আয়োজন, আহারের আয়োজন সমস্তই সেবাবতী নিজের হাতে ক’রে থাকেন। বুদ্ধিমতী রানী গেলে সেবাবতী ছুটে এসে বুদ্ধিমতীর পা দুখানি ধুইয়ে দেন। নিজের হাতে তৈরি নরম ফুলের মতো আসনে তাকে বসিয়ে পাখার বাতাস দেন, না হয় চুল খুলে চুল ফুলিয়ে দেন, না হয় পায়ে হাত বুলিয়ে দেন। সেবাবতী সেবা ভিন্ন একদণ্ডও থাকতে পারেন না। সেবাবতীর কাছে বসে একটু আরাম উপভোগ করে গল্পগুজব ক’রে উঠে যান ছোটরানী সোহাগিনীর মহলে।

এখানে এলে প্রায়ই দেরি হয়। সোহাগিনী সবচেয়ে ছেলেমানুষ, বিষম আবদারে আর অভিমানিনী। অর্ধেক দিনই তিনি অভিমান ক’রে না খেয়ে-দেয়ে শুয়ে থাকেন গোঁসাঘরে। বুদ্ধিমতী গিয়ে তাকে বহুক্ষণ ধরে সাধ্য-সাধনা করে আদর করে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তুলে স্নান করান, ভাত খাওয়ান, যতক্ষণ না তার মলিন মুখে হাসি ফোটে ততক্ষণ তিনি নড়েন না। সোহাগিনী হাসলে, সহজ হ’লে, তারপর বুদ্ধিমতী নিজের মহলে ফিরে এসে স্নান-আহার করেন।

মোটের ওপর সাত রানীতে খুব ভাব, একটুও হিংসে নেই, আড়ি নেই রানীদের মধ্যে।

সারা রাজ্যের লোক রানীমাদের রূপ-গুণ, বিদ্যা-বুদ্ধি আর সেবাধর্মের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

রাজামশায়ের মনে কিন্তু সুখ নেই, রানীদের কারুর ছেলে হয়নি। নিঃসন্তান রাজা মনের দুঃখে কাল কাটান, তিনি মারা গেলে তার পিতৃ-পিতামহের নাম ডুবে যাবে, বংশ লোপ পেয়ে যাবে। পিতৃ-পুরুষরা জলপিণ্ড পাবেন না আর!

ক—তো যাগযজ্ঞি, ক—তো ওষুধ-বিষুধ, মানত-উপোস হ’ল, কিছুতেই কিছু হয় না। সাত রানীর একজনেরও সন্তান হ’ল না।

একদিন মহারাজ বনে মৃগয়া করতে গিয়েছেন। স্ত্রীলোকের কাতর চিৎকার শুনতে পেয়ে সেইদিকে ছুটে চললেন।

‘কে কোথায় আছো, রক্ষা করো—রক্ষা করো—” রাজামশায় উঁচু গলায় হাক দিয়ে সাড়া দিলেন—“কে কার উপর অত্যাচার করে ?—আমি এই রাজ্যের রাজা....সাবধান!”

রাজামশায়ের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গেই একটা বিকট-আকার রাক্ষস মড়-মড় শব্দে বনের গাছপালা ভাঙতে-ভাঙতে দারুণ গর্জন করে মহারাজের দিকে তেড়ে এলো। মহারাজের দেহে শক্তি ছিল অসীম। তা ছাড়া, অস্ত্রচালনায় তার জুড়ি ছিল না। অল্পক্ষণের মধ্যেই রাক্ষসটাকে যুদ্ধে পরাস্ত করে ফেললেন। এগিয়ে গিয়ে দেখেন, এক বুড়ী ঋষিপত্নী বসে বসে কাঁদছেন। রাক্ষসটা তার ব্রত-পূজার আয়োজন নষ্ট করে দিয়েছে। -

রাজামশায় বললেন—“মা, আমি দুষ্ট রাক্ষসকে মেরে ফেলেছি, আপনার কোন-কোন জিনিস নষ্ট হয়েছে বলুন, আবার সংগ্রহ করে এনে দেবো।”

ঋষিপত্নী রাজার কথা শুনে খুব খুশী হলেন। হাত তুলে বললেন—“বাবা, তুমি আজ আমার ছেলের কাজ করেছো, তোমা হতে আমি যেমন খুশী হয়েছি— তুমিও তেমনি তোমার নিজের ছেলে থেকে এমনি খুশী হবে, আশীৰ্বাদ করছি!”

রাজামশায় মাথা হেঁট ক’রে বললেন—“মা, আমি নিঃসন্তান, আমার ছেলে নেই।” ঋষিপত্নী তখন ঘরের ভিতর থেকে একটি ছোট ফল এনে রাজার হাতে দিয়ে বললেন—“কাল ভোরবেলা স্নান করে পূর্বমুখী হয়ে এই অনন্ত ফলটি রানীমাকে খেতে বোলো। দেখো, যেন ফলটিতে কোনো ছেদ না পড়ে। এই ফল খেলে, পরম সুন্দর বীর পুত্র কোলে পাবেন মহারানী।”

রাজা আনন্দে আটখানা হয়ে ফলটি নিয়ে রাজধানীতে তাড়াতাড়ি ফিরে এলেন। রাজপুরীতে এসে রাজামশায় একেবারে সোহাগিনী রানীর মহলে গিয়ে তার হাতে ফলটি দিয়ে সমস্ত কাহিনী বললেন। সোহাগিনী রানী শুনে বললেন—“আগে বুদ্ধিমতী রানী-দিদিকে ডাকি। তিনি এসে যেমন বলবেন, তেমনি করলে ভালো হবে।”

রাজা বললেন—“তা হোক। বুদ্ধিমতী রানী-দিদি কখনো মন্দ পরামর্শ দিতে পারেন না।”

বুদ্ধিমতী রানী এলেন। সমস্ত শুনে তিনি বললেন—মহারাজ ! এই ফল পাটরানী-দিদিকে খেতে দেওয়া উচিত। তিনিই যথার্থ রাজমাতা হওয়ার যোগ্যা। আমরা সকলেই তাকে মানি, তাকে ভক্তি করি, তার গর্ভে ভবিষ্যৎ রাজা জন্ম নিলে আমাদের সকলেরই মর্যাদা বাড়বে। আপনি আর সকল রানীর মত জিজ্ঞাসা করুন।”

বিদ্যাবতী, সেবাবতী, রূপবতী ও সোহাগিনী সকলেই বুদ্ধিমতীর মতে মত দিলেন। ফল খাওয়ার এক বৎসরের মধ্যেই পাটরানীর গর্ভে সূর্যের মতো উজ্জ্বল, চন্দ্রের মতো স্নিগ্ধ এক পরম রূপবান পুত্র জন্মালো, রাজ্যে আনন্দ-উৎসব পড়ে গেল। ছয় রানী গিয়ে পাটরানীর আঁতুড়ঘর ঘিরে বসে রইলেন, ছয় রানীর কোলে-কোলে রাজকুমার বাড়তে লাগলো—পূর্ণিমার শশিকলার মতো।

বিদ্যাবতী মায়ের কাছে থেকে বিদ্যা, নান ভাষা, জ্ঞান বিজ্ঞান, শাস্ত্রতত্ত্ব অনেক কিছু শিখতে লাগলো রাজপুত্র। গুণবতী মায়ের কাছে নানা গুণপনা, সেবাবতী মায়ের কাছে থেকে সর্বজীবের সেবা। বুদ্ধিমতী মায়ের কাছে সুন্দর সূক্ষ্ম বুদ্ধির বিকাশ ঘটতে লাগলো কুমারের। সোহাগিনী মায়ের কাছ থেকে জিদ আর অভিমান এ দুটি দোষও বেশ এলো রাজপুত্রের স্বভাবে। কুমারের এত রূপ, এত গুণ, এত বিদ্যা, এত বুদ্ধি, কিন্তু এক-একটা বিষয়ে এমন জিদ ধরেন, তখন সে জিদ স্বয়ং রাজামশায়ও ভাঙাতে পারেন না।

অনেক বছর কেটে গেছে। রাজামশায় বুড়ো হয়ে পড়েছেন। রাজপুত্র এখন যুবরাজ। একদিন রাজপুত্র নগরের বাইরে ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতে গেছেন। নদীর ধারে এক পাগলকে দেখতে পেলেন। সে পাগল আকুল চিৎকার করে বলছে—“আর-একবার তাকে দেখতে চাই, আর একটিবার মাত্র দেখতে চাই।”

ঐ একটিমাত্র কথাই সে মাঝে-মাঝে ফুকরে বলে উঠছে আর দূর শূন্যের পানে চোখ মেলে পথ হেঁটে চলেছে। মাথার চুলে জট পড়েছে, সমস্ত শরীর ধুলোয়-কাদায় মলিন, পোশাক ছিড়ে কুটি-কুটি হয়েছে, কিন্তু তবুও পাগলকে দেখলেই বোঝা যায়, এক সময়ে সে খুব রূপবান পুরুষ ছিল।

রাজকুমার তার ঘোড়ার সহিসকে জিজ্ঞাসা করেন—“লোকটি কে জানো কি? ও কি দেখতে চায় আর একবার ?”

সহিস সেলাম ক'রে বললে—“যুবরাজ, ঐ লোকটি এক বিদেশী রাজকুমার। ও এখন পাগল হয়ে দেশে-দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এক পরমাসুন্দরী পরী-রানীকে দেখে তার সৌন্দর্যে ও পাগল হয়ে গেছে। রাজসিংহাসন ছেড়ে দিয়ে, দেশভূমি বাপ-মা ত্যাগ করে ফকির হয়ে পথে-পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর একবার সেই পরী-রানীকে দেখবার ঝোকে।”

রাজপুত্র বললেন—“সে পরী-রানীকে ও কোথায় দেখতে পেয়েছিল, জানো?” সহিস বললে—“এখান থেকে বহুদূরে—সাত সমুদুরের মাঝে এক মনুষ্যহীন দ্বীপ আছে, সেই দ্বীপে বৎসরে একদিন স্বর্গের পরীরা সমুদ্র-স্নানে নেমে আসেন চৈত্র-পূর্ণিমার রাত্রে। সেই রাত্রি ছাড়া অন্য কোনোদিন অন্য কোনো স্থানে স্বর্গের পরীকে মর্ত্যের মানুষেরা দেখতে পায় না। কিন্তু শুনেছি, যারাই পরীদের দ্যাখে, তারাই নাকি অমনি পাগল হয়ে যায়। সে-রূপ মর্ত্যের মানুষ সহ্য করতে পারে না।” .

রাজপুত্র বললেন—“আমার সহ্য হবে। আমি দেখতে যাবো স্বর্গের পরীদের।”

সহিস ভয়ে জিভ কেটে, দুই কানে হাত দিয়ে বললে—“অমন কথা মুখেও আনবেন না যুবরাজ। সাত রানীমা শুনতে পেলে প্রাণত্যাগ করবেন।”

যুবরাজ দৃঢ়স্বরে বললেন—“না। আমি যাবোই দেখতে। তুমি রাজপুরীতে ফিরে যাও। খবর দিও মায়েদের, আমি পক্ষিরাজে চড়ে সাত-সমুদ্রের মধ্যিখানে মনুষ্যহীন দ্বীপে যাচ্ছি। চৈত্র-পূর্ণিমা রাত্রে সেখানে স্বর্গের পরীদের স্বচক্ষে দেখবো। পারি যদি গোটা-কতক বাচ্চা-পরী ধরেও আনবো মায়েদের জন্যে। বাবা আর মায়েরা যেন আমার জন্যে চিন্তা না করেন!”

রাজপুত্র পক্ষিরাজ ঘোড়ায় চেপে পরীর খোঁজে সাত-সমুদ্রের মাঝ-মধ্যিখানে জনহীন দ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন।

সাত বৎসর, সাত মাস, সাত পক্ষ, সাত দিন, সাত রাত্রের পর রাজকুমার ফিরে এলেন সাত রঙের পরমাসুন্দরী সাতটি পরী নিয়ে, কাঁধে সোনালী রুপোলী ডানা-সমেত সত্যিকারের পর। আকাশের পরীকে মর্ত্যের মাটিতে পেয়ে সাত রানীমার আনন্দ আর ধরে না। পরীদের হাত জোড়া ডানা কেটে তখুনি সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হ’ল, তারপর শাখ বাজিয়ে—উলু দিয়ে—তেল হলুদ সিঁদুর-শাখা দিয়ে সাত রঙের সাত পরীর সঙ্গে রাজকুমারের বিয়ে দিয়ে ফেললেন। সাত রানীমার সাত মহলে লাল পরী, নীল পরী, হলদে পরী, সবুজ পরীরা বৌ হয়ে শ্বশুর-শাশুড়ীর সেবা শিখতে লাগলো।

আমার কথাটি ফুরুলো...... এইবার তোমরা ঘুমুতে চলো।

COMMENTS

Name

Andrew-Kishore,1,অগ্নিপুরুষ,10,অনীশ,2,অন্য-ভুবন,3,আজ-হিমুর-বিয়ে,3,আবু-ইসহাক,1,আমি-এবং-আমরা,3,আমিই-মিসির-আলি,3,উপন্যাস,15,উপেন্দ্রকিশোর-রায়চৌধুরী,2,একজন-হিমু-কয়েকটি-ঝিঁঝিঁ-পোকা,5,এবং-হিমু,5,কবিতা,2,কহেন-কবি-কালিদাস,2,কাজী-আনোয়ার-হোসেন,18,কাজী-নজরুল-ইসলাম,2,গজল,1,গল্প,3,গানের-লিরিক,9,চলে-যায়-বসন্তের-দিন,3,চোখ,1,ছোট-গল্প,35,ছোটদের-গল্প,17,জলের-গান,1,জেমস,2,তন্দ্রাবিলাস,3,তোমাদের-এই-নগরে,4,দক্ষিণারঞ্জন-মিত্র-মজুমদার,1,দরজার-ওপাশে,4,দেবী,7,দেশাত্ববোধক-কবিতা,1,দেশাত্ববোধক-গান,2,নিশীথিনী,4,নিষাদ,3,পঞ্চতন্ত্র,1,পাগলা-দাশু,4,পারাপার,4,পুফি,3,বইয়ের-তালিকা,1,বাঘবন্দি,3,বিখ্যাত-গান,3,বিপদ,2,বৃহন্নলা,2,ভয়,5,মজার-গল্প,23,ময়ূরাক্ষী,4,ময়ূরাক্ষীর-তীরে-প্রথম-হিমু,1,মাসুদ-রানা,18,মিসির-আলি-UNSOLVED,4,মিসির-আলি-আপনি-কোথায়,3,মিসির-আলি-সমগ্র,55,মিসির-আলির-অমিমাংসিত-রহস্য,3,মিসির-আলির-চশমা,3,মুহম্মদ-জাফর-ইকবাল,1,মোশতাক-আহমেদ,1,মোহাম্মাদ-জসীম-উদ্দীন-মোল্লা,2,যখন-নামিবে-আঁধার,2,রবীন্দ্রনাথ-ঠাকুর,3,রম্যগল্প,4,রাধারানী-দেবী,1,রুপকথার-গল্প,4,শরৎচন্দ্র-চট্টোপাধ্যায়,2,শেখ-আবদুল-হাকীম,8,শ্রী-ক্ষিতীশচন্দ্র-কুশারী,1,সায়েন্স-ফিকশন,1,সুকুমার-রায়,7,সে-আসে-ধীরে,4,সেবা-প্রকাশনী,4,সৈয়দ-মুজতবা-আলী,1,স্বর্ণদ্বীপ,7,হরতন-ইশকাপন,2,হলুদ-হিমু-কালো-RAB,6,হাসির-গল্প,23,হিমু-এবং-একটি-রাশিয়ান-পরী,3,হিমু-এবং-হার্ভার্ড-PhD-বল্টু-ভাই,7,হিমু-মামা,6,হিমু-রিমান্ডে,9,হিমু-সমগ্র,80,হিমুর-দ্বিতীয়-প্রহর,3,হিমুর-বাবার-কথামালা,8,হুমায়ূন-আহমেদ,135,
ltr
item
গল্প এর বই: সাত রানীর গল্প - রাধারানী দেবী
সাত রানীর গল্প - রাধারানী দেবী
রূপবতী রানী সারাদিন রূপচর্চা নিয়ে কাটান। একজন দাসী তার কচি পল্লবের মতো নরম পা দুখানির সেবা করে। পায়ের রংয়ের সংগে রং মিলিয়ে গোলাপী আলতা পরায়, পায়
গল্প এর বই
https://golpoerboi.blogspot.com/2021/06/7-ranir-golpo-radha-rani-debi.html
https://golpoerboi.blogspot.com/
https://golpoerboi.blogspot.com/
https://golpoerboi.blogspot.com/2021/06/7-ranir-golpo-radha-rani-debi.html
true
2280349116972597382
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content