নরওয়ের রূপকথা || রুপকথার গল্প

নরওয়ের রূপকথার গল্পগুলো পড়ুন- ১. এক যে ছিল ছাগলছানা ২. অহংকারী খরগোশ ৩. সাতটি ছাগল ছানা ৪. ভালুকের বড়াই

নরওয়ের রূপকথা

 এক যে ছিল ছাগলছানা - নরওয়ের রূপকথা 


এক যে ছিল ছাগল ছানা। খুব ভীতু। সবসময় সে তার ঘরের আশেপাশেই থাকত। বাইরে যেত কম। বন্ধুরা একদিন খোঁচা দিল— ঘরের বাইরে বেরিয়ে কিছু দেখে এস। জানার আছে অনেক কিছু!

ছাগলছানার মাথাতে ভূত চাপল। ঠিক করল— দূরে, বহুদূরে যাবে সে । মা-বাবা কাউকে কিছু বলল না। এক বিকেলে বেরিয়ে পড়ল। আকাশ মেঘলা । জোরে বাতাস বইছে। একা একা হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যা মাথায় করে বনে ঢুকল সে । কী অন্ধকার ভেতরে! লম্বা লম্বা দেবদারু গাছের মাথা কাঁপছে বাতাসে । আকাশ জুড়ে কালো কালো মেঘের পরত। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল। কড়..কড়াৎ শব্দে বাজ পড়ছে।

ছাগলছানা ভয়েই দিশেহারা। এদিক-ওদিক এলোমেলো খানিক ছুটোছুটি করল। সে ভাবল— এবার নির্ঘাত মরণ। খানিক পরেই শুরু হল অঝোর বৃষ্টি । বৃষ্টির তোড়ে যেন ভেসে যাচ্ছে সব। ঠাণ্ডায় কুঁকড়ে গেল ছাগলছানা।

মনের সব সাহস জড়ো করে ছোটা শুরু করল । বন-জঙ্গল ঝেঁটিয়ে এল এক নদীর পাড়ে। মরণ হবে ভেবেই সে উঁচুমতো একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে সব।

তারপর? তারপর শান্ত হল চারপাশ। রাত পুইয়ে সকাল হল। বৃষ্টিধোঁয়া আকাশ ভেঙে উঁকি দিল রোদুর। ছাগলছানা দেখল চারদিকে শুধু পানি আর পানি। সে ছোট্টমতো একটা দ্বীপে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সব ভেসে গেছে পানির তোড়ে। অনেক দূরে শুকনো ডাঙা।

ছাগলছানা সাঁতার জানে না। কোনোকিছু করার নেই তার। সাহায্যের অপেক্ষায় বসে থাকতে হবে। তাই চুপচাপ বসে রইল সে। ঠাণ্ডায় শরীর কাঁপছে। তক্ষুনি দেখতে পেল একটা গোবদা ভেড়া নৌকো চালিয়ে যাচ্ছে। ছাগলছানা চেঁচিয়ে উঠল—

'আমাকে বাঁচাও, ভেড়া ভাই।’

‘নৌকায় আমার একদম জায়গা নেই।”

গোবদা ভেড়া কথা ক’টি বলে চলে গেল তার নৌকো নিয়ে। ছাগলছানা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। কী আশ্চর্য পড়শি হয়ে ভেড়াটা এমন করল! আবার একা একা বসে থাকা— বসে থাকা ।

বদ্ধ পানিতে ভাসছিল দুটো গাছের গুড়ি। তার উপর বসে রক্তখেকো এক নেকড়ে আর তার বউ খানিকটা দূরে খেলা করছিল। হঠাৎ তাদের নজরে পড়ল— দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এই ভয়কাতুরে ছাগলছানাকে ।

‘বাহ! এ রকম একটা কচি ছাগল পেলে ভোজনটা তোফা জমত ’ নেকড়ে জিভ চাটতে লাগল। ওখানে গিয়ে ধরা যায় কীভাবে? নেকড়ে-গিন্নি জানতে চাইল ।

‘সাঁতরে গিয়ে ধরতে হবে।’ ‘আমি কিন্তু সাঁতরে যেতে পারব না। তার চেয়ে বরং ডেরায় ফিরে যাই। সবাই মিলে যুক্তি এঁটে তারপর একটি উপায় বের করা যাবে।’

নেকড়ে ও তার গিন্নি তাড়াতাড়ি ফিরে গেল আপন ডেরায় । ছাগলছানা একা-একা বসেই আছে। লতাপাতার ঝোপঝাড় ভেসে যাচ্ছে বেশ খানিকটা দূর দিয়ে। এ রকম একটা ঝোপঝাড়ে চড়ে বসার বুদ্ধি আটল সে। কিন্তু পোড়া কপাল! সামনে দিয়ে যায় না একটাও ।

দুপুর গড়িয়ে চলল। কেউ এল না তাকে উদ্ধার করতে । ‘কোয়াক ! কোয়াক!’ কে যেন মাথার উপরে ডেকে উঠল। ছাগলছানা তাকাল। একটা বাচ্চা হাঁস উড়ছে। কী করছ এখানে? বাচ্চা হাঁসটা শুধাল ।

‘দেখতে পাচ্ছ না!" ছাগলছানা বলল, ‘কেউ আমাকে রক্ষা করবে, এই আশাতেই বসে আছি। আমি উড়তে জানি না, সাঁতারও জানি না।’

ভয় পেয়ো না বন্ধু । বাচ্চা হাঁস জানাল। ধৈর্য ধর। আমরা তোমাকে রক্ষা করব ।”

বেলাবেলি নদীর তীরে তীরে ছড়িয়ে পড়ল ছাগলছানার খবর। দয়ালু পশুপাখিরা ছুটে এল । খরগোশ এল লাফাতে লাফাতে, হামাগুড়ি দিয়ে এল সারস। বেলেহাঁস এল পেলিক্যানদের সঙ্গে নিয়ে। গাধা এল, এল বানর। বাচ্চা হাঁস পুরো ঘটনাটা শোনাল সবাইকে ।

রাজি হল সবাই ।

আমি অবশ্যই রক্ষা করব, বলল খরগোশ । সবাই মিলে সাহায্য করব ওদের । পেলিক্যানদের দিকে তাকিয়ে কথা ছুড়ল বেলেহাঁস ।

সারস জানাল, কিন্তু কীভাবে।

আমরা সবাই মিলে ভেলা তৈরি করব । শিগগির গাছ কাটার কাজে লেগে যাও।”

সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বনের ভেতর তারা কলাগাছ খুঁজে বের করল । শুয়োর এল ধারাল দাঁত নিয়ে। কলাগাছের গোড়ায় মাটি খুঁড়ে সে আলগা করে দিতে লাগল। গাছগুলোকে গাধা এসে লাগাল পিঠ দিয়ে ধাক্কা । আর সেই ধাক্কায় কলাগাছ একটা একটা করে উপড়ে পড়তে লাগল। চারটি কলাগাছ দিয়ে দিব্যি তৈরি হল একটা ভেলা । বানর নিয়ে এল লতা । কষে বাঁধল সেই ভেলা ।

হঠাৎ করে চড়ুই এল উড়তে উড়তে । "এইমাত্র দেখে এলাম ছাগলছানাকে । জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে চড়ুই বলল, সে কাঁদছে। খুব খিদে তার পেটে । কী করা যায়?

ভাবনায় পড়ল খরগোশরা। সারস বলল, কিছু খাবার পাঠিয়ে দেয়া যাক । বেলেহাঁস জানাল, ‘পেলিক্যান থাকতে চিন্তা কী?

খরগোশ কিছু শালগম, গাজর নিয়ে এল। পেলিক্যান ফাঁক করে ধরল তার বিরাট দুটো ঠোঁট । সেই ঠোঁটে খাবার নিয়ে উড়াল দিল সে ।

এদিকে বুলবুলি এসে খবর দিল, তিনটে রক্তচোষা নেকড়ে ছাগলছানাকে ধরার জন্য রওনা দিয়েছে ?

কী করা যায়? কী করা যায়? পাখিরা সবাই সমস্বরে বলল, আমরা চল যাই । উপর থেকে পাথর ছুড়ব । নিচে নেমে ঠোকর মারব। দেখি ওদের ঘায়েল করা যায় কিনা ?

তারা তাড়াতাড়ি যে যার কাজ ঠিক করে নিল। বানর দল ভেলা ভাসাল। আকাশপথে দ্রুতবেগে চলল পাখিরা।

নেকড়ে তিনটে গাছের গুড়িতে চেপে চলেছে। মনে তাদের আনন্দ । সেই ছোট্ট দ্বীপের প্রায় কাছাকাছি এসে পড়েছে তারা। একজন আরেকজনকে বলছে : ‘প্রায় এসেই গেলাম নাকি? ছাগলছানা প্রথম ধাক্কায় আমাদের পেয়ে ভাববে— বুঝি উদ্ধার করতে যাচ্ছি তাকে । কিন্তু বেচারাকে ধরব আর খাব।”

চুকচুক করে তিনজনে জিভ চাটল । এমন সময় মাথার উপর ঝাঁক বেঁধে এল পাখিরা। মুখে তাদের পাথর। ঝুরঝুর করে পড়তে লাগল সে পাথর। বাজ আর ঈগল এসে ঠোকর মারছে নেকড়েদের । কিছু বোঝার আগেই হেলেদুলে নেকড়েরা পড়ে গেল পানিতে । পেলিক্যানরা এল আস্তে-ধীরে। বড় বড় পাথর ওদের ঠোঁটে । টুপ করে ছেড়ে দিল এক-একটি পাথর নেকড়েগুলোর ঘাড়ে। ওদের অবস্থা তখন— ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি । সাঁতরে ওরা গিয়ে উঠল নদীর পাড়ে । ঠোকর খেয়ে চামড়া ছিড়ে গেছে জায়গায় জায়গায় ।

এমন সময় দ্বীপে গিয়ে পৌছল সেই ভেলা। ছাগলছানা তো অবাক । ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে জড়িয়ে ধরল সে বানর আর খরগোশদের । তারপর আনন্দে-খুশিতে লুটোপুটি করতে করতে ফিরে এল সবাই। ছাগলছানাকে ওরা পৌছে দিল বাবা-মা'র কাছে। বাবা-মা তো খুঁজতে খুঁজতে সারা । তারা সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাল। তারপর নেমন্তন দিল।

পরদিন নেমন্তন খেতে এল পশুপাখিরা। সেই যে গোবদা ভেড়া— সে-ও এল । ছাগলছানাকে রক্ষা করেনি বলে কেউ ওকে পাত্তাই দিল না। এ রকম স্বার্থপর পড়শিকে কারো দরকার নেই। লজ্জা পেয়ে ভেড়া একা-একা চলে গেল ।

সে কী গানবাজনা আর হইহুল্লোড়! সারারাত মাতোয়ারা রইল পশুপাখিরা। খেয়ে খেয়ে ঢেঁকুর তুলল আয়েশে। শেষে সবাই যখন যার-যার ঘরে ফিরে গেল, ছাগলছানা তখন ভাবল আগের দিনের কথা। সেই বিপদের কথা। পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। কিন্তু তার বুকে যে এত বিপদ বাধা লুকিয়ে আছে, কে জানত। আসলে বাবা-মাকে জানিয়ে গেলে হয়তো এমনটি আর ঘটত না ।



রাজকন্যের হাসি - নরওয়ের রূপকথা




রাজকন্যের মন ভালো নেই। খায় না, দায় না, নিশিরাতে ঘুমোয় না। মুখ তার গোমড়া। চোখে জল টলমল । রাজা পড়েছেন ভাবনায় । রানি করেন চিন্তা ।

ব্যাপার কী? ব্যাপার কী? ভেবে ভেবে হন প্রাণান্ত ।মন্ত্রীরাও পায় না কোনো কূলকিনারা ।

রাজ্য জুড়ে অশান্তি । রাজকন্যের মুখে হাসি নেই। রাজারও তাই মন খারাপ । রাজকাজে মন বসে না তার। রাজকন্যে রাজপ্রাসাদের আলো । তার মুখে হাসি থাকলে পুরী করে গমগম। বৃষ্টি নামে ঝমঝম। বাগানে ফুল ফোটে। পাখি গান গায়। চাঁদ ঢালে আলো । আর সেই রাজকন্যা সারাক্ষণ থাকে কিনা চুপচাপ । কারো সাথে কথা বলে না। রাজার মনে শান্তি থাকে কীভাবে?

ঘোষণা দিলেন তিনি---

কন্যার মুখে হাসি ফোটাতে পারবে যে তার সঙ্গে হবে তার বিয়ে । তাকে করা হবে এই রাজ্যের রাজা ?

দেশে দেশে জানানো হল সেই ঘোষণা ।

সেই ঘোষণা গিয়ে পৌছাল এক গাঁয়ে, এক চাষির ছেলের কানে। ফুটফুটে তার চেহারা। মায়াভরা তার চাউনি। মুখে কথার খই ফোটে। যেমন তার শরীর তেমনই তার শক্তি ।

রাজার ঘোষণা শুনে মন হল তার উতলা। চাষিকে বলল সে, বাবা, আমি রাজার মেয়ের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। আমাকে যেতে দাও।”

বাবা অবাক হলেন । ‘এই কাজ তুই পারবি কী করে? কেউ যা পারছে না— তুই সে সাহস করিস কী করে?”

চাষির ছেলে নাছোড়বান্দা । বাবা দিলেন অনুমতি । চাষির ছেলে চলল, রাজপ্রাসাদে যাবে সে । সঙ্গে নিল তার পোষা ঘোড়া । সেই ঘোড়ার পিঠে চাপলে সে থোড়াই কেয়ার করে অন্য কিছু।

শুভদিনে, শুভক্ষণে, মেঘভাঙা রোদ মাথায় নিয়ে রওনা দিল চাষির ছেলে । ছুট ছুট ছুট... ধু ধু মাঠ পেরিয়ে, বরফের পাহাড় পেরিয়ে ছুটিয়ে দিল ঘোড়া। মা তাকিয়ে রইল পথের পানে । বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আপন মনে ।

টগবগ, টগবগ ছুটছে ঘোড়া । রাজকন্যের মুখে যেভাবেই হোক হাসি ফোটাবে সে । এই ঘোড়ার ছিল অনেক গুণ । ঘোড়া যখন ছুটতে থাকে তখন কারো যদি স্পর্শ লাগে তবে সে আটকে যাবে ঘোড়ার সঙ্গে। ঘোড়া ছুটবে, সে-ও ছুটবে।

ঘোড়ার প্রভু হল চাষির ছেলে। সে যতক্ষণ না হাত বুলিয়ে দেবে ততক্ষণ ঘোড়াও ছাড়বে না কাউকে ।

চলতি পথে দেখা হল আজব রকম একপেয়ে একজন লোকের সঙ্গে ! একটা ঠ্যাং কাঁধে চাপিয়ে লোকটা দিব্যি লেংচে লেংচে হটছে । চাষির ছেলে তাকে দেখে অবাক হল ।

কী ব্যাপার! এইভাবে হাঁটছ কেন তুমি?

একপেয়ে লোকটা মুচকি হাসল। আমায় দেখে অবাক হয়াঁ না। দুই-পা মাটিতে থাকলে সেকেন্ডে আমি যাই একশো মাইল।

বলে কী লোকটা!

শুনে থ হয়ে যায় চাষির ছেলে । সঙ্গী করে নেয় লোকটাকে ।

আবার তাদের যাত্রা শুরু ।

যেতে যেতে এবার দেখে, পথের মধ্যিখানে একজন লোক চোখ বন্ধ করে বসে রয়েছে। আরেকটু হলে ঘোড়া তাকে মাড়িয়েই দিত আর কী!

ব্যাপার কী গো? ব্যাপার কী?”

দুঃখের কথা বলব কি ভাই– খোলা চোখে কাছের জিনিস দেখতে পাই না মোটেই। চোখ খুললেই একশো মাইল দূরের জিনিস দেখি ।

এ লোকটাকেও সঙ্গী করে নেয় ওরা । একপেয়ে, চোখ-বন্ধ আর চাষির ছেলে— তিনজনে চলল রাজপ্রাসাদের দিকে। সূর্য ডুবে রাত নামে। রাত পুইয়ে সকাল হয়।

যেতে যেতে দেখা হল আরেক অদ্ভুত লোকের সঙ্গে। পানিভরা বোতলের মুখ আঙুলে চেপে রাস্তার মধ্যে তিড়িং বিড়িং করে নাচছে সে।

“এমনভাবে নাচছ কেন ভায়া? প্রশ্ন শুনে উত্তর দিল বোতলঅলা, আঙুল খুললেই একশো মাইল বেগে ছুটবে পানি। বোতলের পানি অফুরন্ত। নিমেষে মরুভূমিকে বানিয়ে দিতে পারে সাগর। তাই না শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল চাষির ছেলে একপেয়ে আর অন্ধের সঙ্গে পরিচিত হয়ে বোতলঅ'লা আপনা আপনি সফরসঙ্গী হয়ে গেল । মুখগোমড়া রাজকন্যের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। এ আর এমন কী ব্যাপার! সবাই মিলে রওনা দিল রাজপ্রাসাদের দিকে ।

ইতিমধ্যে হয়েছে এক কাণ্ড! চলতি পথের লোকজন, গাছপালা, জীবজানোয়ার আটকে যাচ্ছে ঘোড়ার গায়ে । যাকে দেখে তাকেই টেনে নেয় ঘোড়া । খোড়া, কানা, ল্যাংড়া, লম্বা, ট্যাঙা— নানা ধরনের লোকজন, নানা ধরনের জীবজন্তু আটকে রয়েছে ঘোড়ার সঙ্গে। কেউ কাঁদছে, কেউ গোঙাচ্ছে, কেউ-বা চেঁচাচ্ছে প্রাণপণ ।

সে এক দেখার মতো দৃশ্য বটে। যে দেখবে তারই হাসি পাবে। সদলবলে চলল এই বাহিনী । আর ওদিকে— শীত পেরিয়ে বসন্ত এসেছে। ডালে ডালে গজাল নতুন পাতা। বনে বনে গান গাইছে পাখিরা। তবু রাজকন্যের মুখে হাসি নেই। মুখ তার ছাইবরণ, চোখ তার টলোমলো | এমন সময় খবর এল প্রাসাদে দলেবলে হাজির হয়েছে একজন। রাজকন্যের মুখে হাসি ফোটাবে সে । সে রাজার দর্শন পেতে চায় ।

বুড়ো রাজা তাড়াতাড়ি ছুটে এলেন । অদ্ভুত এই দলটাকে দেখেই অবাক হয়ে গেলেন রাজা । ঘোড়ার গায়ে লেপ্টে-থাকা লোকজন ও জন্তুজানোয়ারের বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি দেখে রাজা হেসে ফেললেন ফিক করে। রাণী এলেন । তিনিও হাসলেন ফিক করে।

এ আবার কীরকম কাণ্ড বাপু ঘোড়ার গায়ে লেগে থাকে মানুষ! এ কোন চিড়িয়া বাবা!

রাজকন্যাকে নিয়ে আসা হল সামনে । রাজা হাসছেন । রাণী হাসছেন। মিষ্টি হাসির ঝিলিক খেলে গেল রাজকন্যের মুখেও ।

ভেঁপু বেজে উঠল। রাজ্য জুড়ে হেসে উঠল সবাই। গাছে গাছে পাখিরা গাইল গান। ফুল ফুটল। রাজ্যের লোকের আনন্দ আর ধরে না। রাজ্যের ওপর দিয়ে বয়ে গেল খুশির ঢেউ।

তারপরে সবাই খোঁজ লাগাল, কে সেই সৌভাগ্যবান যে রাজকন্যের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তাকে দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ল লোকজন। কে যেন বলল, আরে, এ যে চাষির ছেলে!’

এক কান, দুই কান— এই খবর ছড়িয়ে পড়ল সবখানে । রাজা ভঙ্গ করলেন নিজের ঘোষণা । অসম্ভব । চাষির ছেলের সঙ্গে রাজকন্যের বিয়ে হতে পারে না । এই না শুনে চাষির ছেলের মাথায় জ্বলল আগুন। কী? এতবড় অপমান? গেল সে মন্ত্রীর কাছে । আমি তো আমার কাজ করেছি। এবারে আপনাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন। মন্ত্রীর পেটে পেটে কূটবুদ্ধি। রাজার সঙ্গে পরামর্শ করল, কী করে চাষির ছেলেকে বিদায় করা যায়!

মন্ত্রী বলল, একশো মাইল দূরে আছে এক ঝরনা। একঘণ্টার মধ্যে সেই ঝরনার পানি এনে দিতে পারলে রাজসিংহাসনের যোগ্য বলে মনে করব তোমায় ।”

চাষির ছেলের পাশে দাঁড়িয়েছিল একপেয়ে। চোখ কচলে হাই তুলে বলল, সে, “এ আবার এক কাজ হল? এই আমি চললাম। যেতে এক সেকেন্ড, ফিরতে এক সেকেন্ড!”

বলেই একপেয়ে কাঁধ থেকে নামিয়ে নিল এক-পা । চোখের পলকে সে হাওয়া । রাজা মন্ত্রী আর ‘জি হুজুরের দল’ সবাই ভাবল— এই অসম্ভব কাজ কীভাবে করবে চাষির ছেলে? যাক নিশ্চিন্ত হওয়া গেল ।

এদিকে এক সেকেন্ড, দুই সেকেন্ড, তিন সেকেন্ড যায়। কিন্তু কোনো পাত্তা নেই একপেয়ের । চোখ-বন্ধ তখন উঠে দাঁড়াল। বলল, “আমি তো সারাক্ষণ বেগার বসে আছি । আমিই তবে ব্যাপারটা দেখার চেষ্টা করি।”

বলেই সে চোখ মেলল। দেখতে পেল, একশো মাইল দূরে ঝরনাতলায় চোখ মুদে শুয়ে আছে একপেয়ে । সময় এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত ।

কী করা যায়? কী করা যায়?

আর কোনো কথা নেই—

বোতলঅলা আঙুল খুলে ফেলল। বোতল থেকে একশো মাইল বেগে পানি গিয়ে আছড়ে পড়ল একপেয়ের গায়ে । চোখ মেলে চাইল সে । ঝটপট পানি নিয়ে একপেয়ে হাজির হল রাজপ্রাসাদে ।

ধন্য ধন্য পড়ে গেল চাষির ছেলের নামে ।

রাজার চক্ষু চড়কগাছ! বুড়ো মন্ত্রী ভাবল, এ বড় গুণী ছেলে । তবু তার মন সায় দেয় না। মন্ত্রী এবার বুদ্ধি দিল, চাষির ছেলেকে মেরে ফেলতে হবে। মন্ত্রী বলল, ‘ওগো চাষির ছেলে, সুদূর ঝরনার জল এনেছ তুমি নিমিষে। কী বলে যে জানাই তোমায় ধন্যবাদ। রাজপ্রাসাদের নিজস্ব মাঠে তোমায় দেয়া হবে অভিষেক ।

সবাই মিলে চলল ওরা মাঠে। গিয়ে দেখে এ কী! না আছে শামিয়ানা । না আছে ফুলের মালা। না আছে তোরণ। শুধু রাজার সৈন্যরা কসরত করছে। চাষির ছেলে বুঝে ফেলল, তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। বোতলঅলা আর দেরি করল না। হুউশ করে ছাড়া শুরু করল সে বোতলের পানি। সেকেন্ডে একশো মাইল বেগে ছুটছে পানি। যেন বান ডেকে যাবে দেশে। সৈন্যরা যে যেদিকে পারল দিল দৌড়। পানির তোড়ে কেউকেউ একশো মাইল দূরে ভেসে গেল।

রাজা আর মন্ত্রী তড়িঘড়ি ছুটে গেল।

বাঁচাও! বাঁচাও!! রক্ষা কর আমাদের '।বোতলঅলা মুখ বন্ধ করল ।

অমনি রাজ্য জুড়ে আনন্দের ঢল বইল ।

রাজকন্যে খুশিতে ডগমগ । সাত-সাত চোদ্দদিন বয়ে গেল খানাপিনার ঢল ।

চাষির ছেলে বসল সিংহাসনে। ওর সারাক্ষণের সঙ্গী— একপেয়ে, চোখ-বন্ধ আর বোতলঅলা ।

এখন, রাজকন্যে যখন-তখন হাসে আর সেই হাসিতে রাজপ্রাসাদ করে আলো ঝলমল ।




 অহংকারী খরগোশ - নরওয়ের রূপকথা 





এক ছিল অহংকারী খরগোশ। দেখতে বেশ নাদুস-নুদুস। কচি কচি মুলো খেত। বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াত। আর ধেইধেই করে নেচে নেচে গান গাইত। লাফিয়ে লাফিয়ে খুব বেগে ছুটতে পারত সে। তাই তার মনে ভারি অহংকার। অন্য খরগোশদের সে গণায় ধরত না। যাকে-তাকে সে শুধুশুধু খোচা দিত। ঘোড়াকে গিয়ে বলত, কী তোমার ঠ্যাঙের ছিরি! দাঁড়িয়ে ঘুমাতে হয়।’ গাধাকে দেখে হেসে গড়িয়ে পড়ল খরগোশ, ‘গাধারে গাধা । তুই এখনো হাঁদাই রয়ে গেলি |’

লম্বা গলা জিরাফকে দেখেও হাসি থামত না খরগোশের ।

হাতি তোর গোদা পায়ে লাথি’, এই বলে সে হাতি বেচারাকে খেপাত ।

গরু, ভেড়া, শজারু, বানর সবাই খরগোশের কথা শুনেছে।

কাউকে খরগোশ পাত্তাই দিত না । সুযোগ পেলেই খরগোশ নিজের গুনগান করত, প্রশংসায় পঞ্চমুখ হত। আর তার চলনে-বলনে ফুটে উঠত অহংকার।

একদিন বনের মাথায় মেঘ কালো করে বৃষ্টি নামল। গাছে গাছে ফুটল বর্ষার ফুল। বনের পাশে শুরু হল ব্যাঙের গান। খরগোশ থাকত সেই নদীর ধারেই।

ব্যাঙের গান শুনে তার মেজাজ গেল বিগড়ে । কারা এমন বিশ্রীভাবে চিৎকার করছে? ওরা কি জানে না— খরগোশ থাকে আশেপাশেই? মূর্খদের যদি একটু বুদ্ধি থাকত!

অহংকারী খরগোশের ভারি রাগ হল । কেউ তাকে কোনোদিন অসম্মান করেনি। আর আজ সারারাত কতকগুলো পুঁচকে তাকে হেস্তনেস্ত করে ছাড়ছে। বৃষ্টির রাতে কোথায় আরাম করে ঘুমুবে তা নয়, কানের কাছে টিন পেটানো গান বাজছে!

পরদিন ঘুম ভাঙতেই খরগোশ গেল নদীর ধারে । কচি ঘাসের ডগা চিবুতে চিবুতে সে গিয়ে দাঁড়াল উঁচু একটা ঢিবির উপর। এদিক-ওদিক তাকাল। খানিকদূরেই গানের জলসা বসিয়েছে কয়েকশো ব্যাঙ। কী কোলাহল তাদের! আনন্দে তারা হাবুডুবু খাচ্ছে ।

রাতে ঘুম হয়নি বলে খরগোশের মেজাজ এমনিতে তিরিক্ষি। ব্যাঙদের লাফালাফি দেখে সে আর ঠিক থাকতে পারল না। খরগোশের মনে তখন অহংকার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তার আশেপাশেই ছিল পাথরের টুকরো। তাই তুলে নিয়ে সে ছুড়ে মারতে লাগল ব্যাঙদের জলসায়।

ব্যাঙরা প্রথমে হতভম্ব। কী ব্যাপার! অনবরত কে যেন পাথরের টুকরো ছুড়ে মারছে। বেশ কয়েকটা ব্যাঙ সঙ্গে সঙ্গেই মারা গেল। ব্যাঙদের তল্লাটে হুলুস্থুল পড়ে গেল। যে যেদিকে পারল ভাগতে চাইল ।

ব্যাঙের রাজা তখন দিশেহারা। নিজেদের আবাস ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু কেন? কী তাদের অপরাধ? আমনি সবার চোখ গিয়ে পড়ল সেই ছোট্ট টিলাটার ওপর। ওখানে দু-ঠ্যাঙে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক নাদুস-নুদুস খরগোশ। এখনও তার বাঁ হাতে রয়েছে একটা লম্বা মুলো ।

ব্যাঙদের ভিরমি খাওয়ার অবস্থা। এ রকম দেখতে-শুনতে সুন্দর এক খরগোশ কেন অযথা তাদের ঢিল মারছে।

ব্যাঙের রাজা আলাপ করে নিল অন্যদের সঙ্গে। খুব তাড়াতাড়ি এর একটা বিহিত করতে হবে । ইতিমধ্যে প্রায় একশো ব্যাঙ মরে গিয়েছে।

ব্যাঙের রাজা বলল, আমিই যাব খরগোশের কাছে। গিয়ে জানব কী কারণ, কী বিত্তান্ত? কেন উনি নির্মমভাবে আমাদের মারছেন।”

মাথা নামিয়ে আস্তে আস্তে একদম টিলার সামনে এসে দাঁড়াল ব্যাঙের রাজা । খরগোশ আবার যেই একটুকরো পাথর তুলে মারতে গেছে অমনি করজোড়ে মিনতি করল ব্যাঙের রাজা, বন্ধ করুন আপনার নিষ্ঠুর পাথর-ছোড়া। কেন মারছেন আমাদের?

হো হো করে হেসে উঠল খরগোশ। এই পুঁচকে ব্যাঙ নিশ্চয়ই কিছুই জানে না তার সম্বন্ধে। খরগোশ কচি মুলোর ডগা চিবোতে চিবোতে বলল, ওহে পচা ডোবার ব্যাঙ, আমি কে জানিস?

অবাক হল ব্যাঙের রাজা। কী বোকার মতো কথা বলছে খরগোশ! বনের রাজা সিংহকেই এখন কেউ চিনতে চায় না! এই খরগোশকে চিনে তার কী লাভ ।

ব্যাঙের রাজা বলল, না চিনলেও এখন চিনতে পেরেছি।’ খরগোশ ছাইরঙা লেজটা পেছনে একপাক ঘুরিয়ে নিল ।

বলল, আমি হচ্ছি এই বনের সবচেয়ে সুন্দর প্রাণী। আমার নাক, চোখ, মুখ গায়ের রং– সবই সত্যি চমৎকার। আমি যত সুন্দর করে ছুটতে পারি অন্য কেউ তা পারে না। এসব ভাবলে অহংকারে আমার বুক ফুলে ওঠে। সেই আমি কিনা গতরাতে ঘুমাতে পারিনি। ঝিরঝির করে কাল বৃষ্টি পড়ছিল। ইচ্ছেমতো ঘুমাব এই ছিল ইচ্ছা। কিন্তু সারারাত্রি তোমাদের ঘ্যাঙোর ঘ্যাং, ঘ্যাঙোর ঘ্যাং-এর জন্যে ঘুম আমার আসেনি।’

ব্যাঙের রাজা বুঝল সব। কিন্তু এর একটা সুরাহা করা দরকার। খরগোশের কথায় বোঝা গেল— খুব অহংকারী সে। ব্যাঙদের এই তল্লাট থেকে ভাগিয়ে সে নিশ্চিন্ত হতে চায়।

ব্যাঙদের রাজা হাতজোড় করে বলল, খরগোশ ভাই, আমি একটু ক্ষণের জন্য অন্যদের সঙ্গে আলাপ করে আসি । তারপরেই ব্যাপারটার একটা মীমাংসা করব ? খরগোশ খুশি হল, না বেজার হল, বোঝা গেল না। ব্যাঙের রাজা ফিরে এসে সবাইকে জানাল সবকিছু। সবার মাথায় হাত ।

শেষে ব্যাঙ বলল, যা হোক একটা কিছু বলে আসি খরগোশকে । পরে আবার আলাপ করা যাবে। কিন্তু আমরা কিছুতেই এ তল্লাট ছাড়ব না। বর্ষা শুরুর গানও আমরা বন্ধ করতে পারি না।’

সবাই হাত তুলে বলল, তাই, তাই, আমরা সইব না এ অন্যায়।’ ব্যাঙের রাজা ফের গেল অহংকারী খরগোশের কাছে। মিনতি করেই খরগোশকে বলল, “এ নদীর তীর ছেড়ে আমাদের অন্য কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। আর আমাদের মুখের ভাষা আমরা বন্ধ রাখতে পারব না। কী করব এখন বলুন?

লাল হয়ে গেল খরগোশের মুখ । এতবড় সাহস পুচকে ব্যাঙগুলোর! চেঁচিয়ে উঠল সে, “তোমাদের সবাইকে পাথর ছুড়ে ছুড়ে মারব আমি ?

ব্যাঙের রাজার বুক কেঁপে উঠল। তবু সে নরম সুরে জীবন-মরণ বাজি ধরল: আচ্ছা খরগোশ ভাই, আমরা তো আর এমনি এমনি নদী ছেড়ে চলে যেতে পারি না। আপনি নাকি খুব সুন্দর ছুটতে পারেন। তাহলে আপনার সঙ্গে আমার বাজি হোক। আগামীকাল আমরা দুজন দৌড় শুরু করব। নদীর বাঁকে যে বটবৃক্ষটা আছে সেখানেই দৌড় শেষ হবে। যে আগে পৌছাতে পারবে সেই জিতবে।’

খরগোশ জানতে চাইল, “যে বাজি জিতবে তার কী হবে? ব্যাঙের রাজা জানাল, আমি হেরে গেলে আমরা সবাই এই তল্লাট ছেড়ে চলে যাব। আর আপনি হেরে গেলে আপনার মাথায় চড়ে পালা করে আমরা সারা বন ঘুরব। রাজি আছেন আপনি?’

খরগোশ মুচকি হেসে রাজি হল ।

ব্যাঙের রাজা বড় মুখে বলে এল দৌড়ের কথা। খরগোশ দৌড়াবে নদীর পার দিয়ে । ব্যাঙ লাফাবে নদীর তীরঘেষা পানির মধ্যে দিয়ে । খরগোশ চোখ-কান বন্ধ করেই জিতে যাবে।

শেষে ব্যাঙের রাজাই এক বুদ্ধি বের করল । বুদ্ধির প্যাঁচে ফেলেই ঘায়েল করতে হবে খরগোশকে ৷ খরগোশ ব্যাঙদের চিনতে পারবে না আলাদা করে । তাই ব্যাঙদের নদীর ধারে বিশ হাত দূরে দূরে লুকিয়ে বসে থাকতে হবে। আর ব্যাঙের রাজা গিয়ে একদম সেই বটগাছের গোড়ায় বসে ঘ্যাঙোর ঘ্যাং ঘ্যাঙোর ঘ্যাং গান গাইবে । খরগোশ নদীর পার দিয়ে দৌড়াবে। সে কিছু বললেই কাছাকাছি ব্যাঙটি জবাব দিয়ে দেবে। এভাবেই কেল্লা ফতে হবে। যা বুদ্ধি তাই কাজ ।

সারারাত ব্যাঙরা নদীর তীর ঘেঁষে লুকিয়ে রইল। আর ব্যাঙের রাজা চলে গেল বটগাছটার গোড়ায় । ওখানেই দৌড়ের বাজি শেষ হবে । ব্যাঙের রাজার ছোটভাই দাঁড়িয়ে রইল দৌড় শুরু করার জন্য। এমন সময় হেলেদুলে এল অহংকারী খরগোশ। পায়ের উপর পা উঠিয়ে বলল, কিহে ব্যাঙাচি, বাজির কথা মনে আছে তো?”

ব্যাঙরাজার ছোটভাই মাথা ঝাকাল— হ্যাঁ তার মনে আছে। খরগোশ কোনো ব্যাঙকে আলাদা করে চিনতে পারবে না। এই এক বাড়তি সুবিধা । কথা আর বাড়াল না। -

শুরু হল দৌড় প্রতিযোগিতা। খরগোশ ছোটে পাগলের মতো । বাতাস কেটে সে যেন উড়ে চলেছে। মাঝেমধ্যে খরগোশ চিৎকার করে ওঠে, "ওহে ব্যাঙরাজা, পেছন পেছন আছ তো, নাকি বেমালুম হারিয়ে গেছ?

তখন লুকিয়ে থাকা কোনো একটা ব্যাঙ তড়াক করে দু-কদম লাফিয়ে বলে, হারিয়ে যাব কেন? তোমার সামনেই আছি। আরও জোরে ছুটতে হবে খরগোশ তোমাকে |

খরগোশ আরও জোরে প্রাণপণ ছোটে । কিন্তু ছুটলে কী হবে, বটগাছের সামনে এসে চক্ষু তার চড়কগাছ। গান গাইছে আর ধেইধেই করে নাচছে সেই ব্যাঙের রাজা । কীভাবে সে খরগোশের আগে পৌছল? অহংকারী খরগোশের সব তালগোল পাকিয়ে গেল ।

এখন বাজি জিতেছে ব্যাঙের রাজা । খরগোশের মাথায় চড়ে ব্যাঙরা এখন বনে বনে ঘুরে বেড়াবে। লজ্জায় মাথা কাটা গেল খরগোশের। সব অহংকার তার ধুয়েমুছে গেছে। মাথা নামিয়ে রইল খরগোশ। একটি কথাও সে বলল না।

খরগোশের মাথায় চড়ে দুই দিন দুই রাত বনের এ-মাথা ও-মাথা ঘুরে বেড়াল ব্যাঙরা ।

পরদিন আবার তোড়েজোড়ে বৃষ্টি নামল। ফুলেফেঁপে উঠল নদীর পানি আর ব্যাঙরা মনের সুখে বর্ষার গান ধরল।



 সাতটি ছাগল ছানা - নরওয়ের রূপকথা 




বনের ধারে ছোট্ট একটি ঘর ।

সেখানে থাকে সাতটি ছাগলছানা আর তাদের মা। ছাগলছানারা নেচে গেয়ে ঘুরে বেড়ায় । গান গায় চিকন সুরে । যা পায় তাই খায়। মায়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে যায় দূরের বনে ।

একদিন ছাগল-মা বলল, আমি আজ কাজে বের হচ্ছি। যাব বেশ দূরেই। ফেরার সময় তোমাদের জন্য নিয়ে আসব ভালো ভালো খাবার |

তাই না শুনে ছাগলছানারা খুব খুশি ।

মা বলল, কিন্তু বাছারা— একটা কথা । দিনকাল ভালো নেই। তোমরা কিন্তু ঘর থেকে বেরুবে না একদম । কোথায় কোন বিপদ ঘটবে কেউ তা বলতে পারে না।’

‘তা হলে আমরা কী করব? জানতে চাইল ছাগলছানারা ।

দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের মধ্যে খেলাধুলা করবে। আমি ছাড়া অন্য কেউ এলে ভুলেও দরজা খুলবে না।’

এই না বলে ছাগল-মা রওনা দিল নিজের কাজে ।

কিন্তু সেই বনে ছিল দুষ্ট পাজি বদমেজাজি এক নেকড়ে। যেমন তার হাঁকডাক তেমন তার তেজ । সারাক্ষণ হুমহুম, সবার ওপর করে জুলুম । নেকড়ে অনেকদিন ধরেই তক্কে তক্কে ছিল, কী করে ছাগলছানাদের সাবাড় করা যায়।

ছাগল-মা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই নেকড়ে বুঝল, এইতো সুযোগ । নেকড়ে পা টিপে টিপে এল ছোট্ট ঘরের সামনে । দরজার পাশে দাঁড়িয়ে নাক উচু করে শ্বাস টানল ।

আহা, চনমনিয়ে উঠল নেকড়ের খিদে ৷

তখন সে ছাগল-মা'র মতো গলার স্বর নকল করে ডাক দিতে লাগল। তবু তা শুনেই ছাগলছানারা বুঝে গেল, এটা তাদের মায়ের ডাক নয়।

তুমি আমাদের মা নও। আমাদের মায়ের ডাক আরও মিষ্টি । আরও চিকন । নেকড়ে টের পেল, সে ধরা পড়ে গিয়েছে। মন খারাপ করে সে গেল এক বুড়ো ভালুকের কাছে ।

ভালুক ভায়া, ভালুক ভায়া— আমায় একটু মধু দেবে? ভালুকের মধু খেয়ে, গলাটাকে আরও নরম করে নেকড়ে গেল আবার ছাগলছানাদের কাছে। এবার তার কণ্ঠটা ভারি নরম, ভারি চিকন ।

বাছারা, দরজা খোল, আমি তোমাদের মা এসেছি।’ ছাগলছানারা বুঝল, সত্যি বুঝি ওদের মা এসেছে। বড় জন জানালার খড়খড়ি তুলে যেই না তাকিয়েছে বাইরে, অমনি দেখে কালো কালো লোমশ দুটি থাবা। জলদি করে বন্ধ করে দিল সে জানালা । তারপর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘তুমি আমাদের মা নও। আমাদের মায়ের পায়ে বড় বড় লোম নেই।’

এই না শুনে নেকড়ে একেবারে চুপ মেরে গেল। তাই বলে নিরাশ হলে চলবে না। আবার সে নতুন ফন্দি আঁটতে লাগল। ছুটতে ছুটতে গেল সে এক নাপিতের বাড়ি । ---

নাপিত ভায়া, নাপিত ভায়া— ক্ষুর দিয়ে আমার পায়ের লোমগুলো একটু চেছে দাও না ভাই ।”

নাপিত বেচারা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে খুব তাড়াতাড়ি নেকড়ের লোম সাফ করে দিল ।

এইবারে নেকড়ে খুব মনের আনন্দে হেলেদুলে এল সেই ছোট্ট ঘরের সামনে । খুব ধীরে ধীরে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল সে। তারপর নরম সুরে বলল, বাছারা, শিগগির দরজা খোল । আমি তোমাদের মা এসেছি।’

ছাগলছানারা ভাবল, সত্যি তাদের মা এসেছে। জানালা খুলে পায়ের দিকে দেখল, এই পা ওদের মায়ের পা । তারপর দরজা খুলল তারা । নেকড়ে তখন হুংকার দিয়ে ঢুকল ভেতরে। ভয়ে-আতঙ্কে চিৎকার শুরু করল ছাগলছানারা । 'বাঁচাও! বাচাও!” কেউ লুকাল টেবিলের তলায়। কেউ লুকাল চেয়ারের পাশে । কেউ গেল চুলোর ধারে । কেউ লুকাল খাটের তলায়। কেউ গেল বালিশের পাশে । নেকড়ের চোখে তখন লোভের আগুন জ্বলছে জ্বলজ্বল করে।

এক-একজনকে ধরে, আর কপাত করে গিলে খায় । মনের আনন্দে টেকুর তোলে। এইভাবে ঝটপট ছয়জনকে সাবাড় করে ফেলল নিমেষে। সবচেয়ে ছোট্ট যে ছাগলছানাটি সে লুকিয়ে ছিল বালিশের পাশে । নেকড়ে তাকে আর

খুঁজে পেল না।

ছয়জনকে সাবাড় করে নেকড়ের তখন ভরাপেট । প্রাণ করে আইঢাই, কোথায়

যাই কোথায় যাই। কিছুদূর হাটতেই নেকড়ে টের পেল শরীর যেন আর চলে না। চোখ জুড়ে নেমে আসছে ঘুম ।

নেকড়ে একটা বটগাছের ছায়ায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। তারপরই সে তলিয়ে গেল গভীর ঘুমে।

ওদিকে বিকেলবেলা ছাগল-মা ফিরল কাজ সেরে । দরজা খোলা দেখেই আঁতকে উঠল। সর্বনাশ! বিপদ ঘটে গেছে। ঘরে ঢুকেই ছাগল-মা পাগলের মতো এদিকে ছোটে, ওদিকে ছোটে। নেই, কোথাও কেউ নেই। তখন কুইকুই করে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এল ছোট্ট ছাগলছানা ।

মা-কে খুলে বলল সব ঘটনা। আর মায়ের কোলের পাশে বসে তিরতির করে কাঁপতে লাগল ভয়ে। ছাগল-মা খুব বুদ্ধিমতী । মাথা ঠাণ্ডা রেখে সে ঘর থেকে বেরুল নেকড়ের খোঁজে। কিছুদূর গিয়েই দেখল, চিৎপটাং হয়ে মনের সুখে গাছের তলায় ঘুমুচ্ছে নেকড়ে শয়তানটা। ছাগল-মা তার পাশে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করল। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। নেকড়ের পেটের মধ্যে কান দিতেই ছাগল-মা শুনতে পেল ছাগলছানাদের নড়াচড়ার শব্দ । মায়ের মন তখন খুশি হয়ে উঠল। তখনই ঘরে ফিরে সে ছুরি আর সুই সুতো নিয়ে আবার গেল নেকড়ের কাছে। ছুরি দিয়ে নেকড়ের পেট চিরল ধীরে ধীরে। পেটের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল ছয়টি ছাগলছানা। ওরা কেউ মরেনি। কারণ নেকড়ে ওদের গিলে খেয়েছিল। ছাগলছানারা নতুন জীবন ফিরে পেয়েই নাচতে লাগল তিড়িং বিড়িং।

ছাগল-মা বলল, শিগগির তোরা পাথরের টুকরো নিয়ে আয়।’

তারপর তারা সবাই মিলে পাথরের টুকরো ভরল নেকড়ের পেটে । ছাগল-মা খুব সুন্দরভাবে পেটটা সেলাই করে দিল। নেকড়ের কিছুই বুঝবার কোনো উপায়ই রইল না ।

ছাগল-মা ফিরে এল আপন ঘরে । ছানাদের নিয়ে একসঙ্গে খেতে বসল মনের আনন্দে |

আর নেকড়ের সেই ঘুম ভাঙল অনেক রাতে। হাই তুলে নেকড়ে যখন চোখ মেলেছে, দেখে চারদিকে কেমন অন্ধকার। আর পিপাসায় যেন কলজে ফেটে যাচ্ছে। কোনোমতে সে উঠে দাঁড়াল। পেট যেন আগের চেয়ে অনেক বেশি ভারী মনে হচ্ছে। কোনোমতে টলতে টলতে নেকড়ে গেল নদীর ধারে ।

আর যেই না সে নেমেছে পানিতে আমনি পেটের পাথরের ওজনের তাল সামলাতে পারল না বেচারা । অত ওজন নিয়ে তলিয়ে গেল পানির গভীরে ।

ছাগলছানারা তারপরে, লতাপাতা খেয়ে, বনে-বাদাড়ে ঘুরে বড় হতে লাগল নিশ্চিন্ত মনে ।



ভালুকের বড়াই - নরওয়ের রূপকথা





ভালুকের সঙ্গে দেখা হল এক ছোট্ট খরগোশের । কোনোকিছু না বলেই খরগোশের কান মলে দিল ভালুক ।

আহ' বলে চেঁচিয়ে উঠল খরগোশ । দু-গালে দুটো থাপ্পড় মেরে চলে গেল ভালুক। শক্তির বড়াই তার উপচে পড়ছে। খরগোশ কাঁদছে আর কাঁদছে। কানের ব্যথা মিলিয়ে গেল। তবু তার কান্না থামে না। এখন সে কী করবে? কেন সে ভালুকের সামনে পড়ল? তার কান বুঝি নষ্টই হয়ে গেছে! সাহায্যের জন্য কার কাছে সে যাবে? ভালুক অনেক শক্তিশালী। নেকড়ে আর শেয়ালও ভালুকের বন্ধু ।

আপন মনেই খরগোশ বলে ফেলল, ‘কে আমাকে সাহায্য করবে?’

কে একজন জবাবও দিল, “আমি করব।” বাঁ চোখের পানি মুছতে মুছতে খরগোশ দেখল, একটা মশা ।

‘তুমি কীভাবে সাহায্য করবে? ভালুককে কিছুই করতে পারবে না। সে অনেক বড়, তুমি অনেক ছোট। তোমার তেমন শক্তিও নেই।’

মশা জবাব দিল, দেখই না।’ ভালুক সারাদিন গহন বনের এমাথা-ওমাথা ঘুরে বেড়াল। সে খুব ক্লান্ত । সন্ধেবেলায় তার দু-চোখ জুড়ে নেমে এল ঘুম । গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে ঝোপঝাড়ে আরাম করে শুয়ে পড়ল সে। যেই না তার চোখ বুজে এসেছে আমনি কানের পাশে বেজে উঠল পুন... পুন... ।

ভালুক জানে, এটা মশার গান। শ্বাস বন্ধ করে ভালুক চুপচাপ পড়ে রইল । মশা নাকের ডগায় বসলেই মজা দেখাবে। মাথার চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে মশা ঠিকই নাকের ডগায় বসল। থাবা দিয়ে ভালুক নিজের নাকে নিজেই থাপ্পড় মারল । মশা ততক্ষণে পালিয়ে গেছে ভো করে। ভালুক ডানদিকে কাত হয়ে আবার চোখ বুজল। সবে ঘুম এসেছে, আবার সেই পুনপুনানি । সময়মতো মশা এসে হাজির হয়েছে। ভালুক আবারও শ্বাস বন্ধ করল। ভাব দেখাল যেন সে ঘুমুচ্ছে । কান খাড়া করে মশার পুনপুন শুনছে ভালুক । কখন এসে মশা তার নাকে বসবে এই তার চিন্তা ।

মশার পুনপুন শব্দ হঠাৎ থেমে গেল। যাক বাচা গেল, ভাবল ভালুক। কিন্তু ততক্ষণে মশাটা ধীরে ধীরে ভালুকের কানে গিয়ে বসেছে। সর্বশক্তি দিয়ে বসিয়েছে এক কামড়। ভালুক লাফিয়ে উঠল। দু-থাবা দিয়ে ঘষতে লাগল কান। চোখে সরষে ফুল দেখল।

কান চুলকিয়ে চোখেমুখে হাঁচি দিয়ে ফের আরাম করে শুল সে । ঘুমঘুম আবেশে দু-চোখ তার বুজে এসেছে। কিন্তু সেই সময়ই কানের কাছে বেজে উঠল সেই একই গান, পুন... পুন। ভালুক গা ঝেড়ে উঠে বসল। অসহ্য এই যন্ত্রণা। চারদিকে মশা যেন ফাঁদ পেতে রেখেছে। আর সময় নষ্ট নয় । হাটতে শুরু করল ভালুক । ঝোপঝাড় পেরিয়ে চলল সে। কিন্তু পোড়া কপাল, মশা তার পিছু ছাড়ল না।

ভালুক দৌডুতে শুরু করল এবার। যতক্ষণ না সে ক্লান্ত হল, ততক্ষণ দৌডুল। তারপর এক ঝোপের ধারে বসল। জোরে শ্বাস দিতে নিতে কান চুলকাল বার কয়েক ।

জায়গাটা খুব নিরিবিলি। অন্ধকার । সব পশুপাখি ঘুমুচ্ছে। আকাশে চাঁদ উঠেছে। জোছনায় ভাসছে বন । শুধু একা জেগে রয়েছে ভালুক। খুব খারাপ লাগছে তার। কী যে হল!

নিজে নিজেই গজগজ করল সে । বেয়াদব মশাটা একেবারে নাজেহাল করে ছাড়ল দেখছি। আগে একটু ঘুমিয়ে নিই। তারপর ধরব মশাটা।

ভালুক এক দেবদারু গাছে পিঠ ঠেকিয়ে ঘুমোল। চোখ বেয়ে নেমে এল রাজ্যের অন্ধকার। স্বপ্ন দেখতে শুরু করল সে : সারা বনে সে একা। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ পেল এক মৌচাক । মধুতে ভরা। হাতের মুঠোয় সবে সে মৌচাক ধরেছে। অমনি পুন... পুন... সেই গান ভেসে এল ।

আবার ছোট্ট মশা এসে আরামের ঘুমটা ভাঙিয়ে দিল। জেগে উঠে ভারি রাগ হল ভালুকের। মাথার উপর চক্কর দিয়ে গান গাইছে তখন সেই মশা। কখনো কাছে, কখনো দূরে।

গানের সুরে সুরে মশা উপরে উঠতে লাগল। একসময় থামল সেই গান। ভালুক ভাবল, যাক রেহাই পেলাম। সে সরে গিয়ে ঝোপে ঢুকে ঘুমের সুযোগ খুঁজল ।

তক্ষুনি শুরু হল অনবরত কামড়। নাকে চোখে মুখে সে কী যন্ত্রনা। কামড়ে কামড়ে জ্বলে উঠেছে ভালুকের পা। অসহ্য জ্বালা। ‘বাঁচাও, বাঁচাও, চিৎকার করে কাঁদতে লাগল বেচারা ভালুক। সারা রাত দু’চোখের পাতা একবারও এক করতে পারল না সে।

‘হে মশা, কী অপরাধ আমার? তোমার কামড়ানো দয়াকরে বন্ধ কর। একমুহূর্তে আমার আর বেঁচে থাকতে মন চাচ্ছে না।’

সূর্য না ওঠা পর্যন্ত মশা জ্বালাতন করল।

একমুহূর্তে ঘুমোতে পারল না ভালুক। মুখচোখ তার ফুলে উঠেছে। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ।

সূর্য উঠল। সারারাত আরামে ঘুমিয়ে জেগে উঠল বনের পশুপাখি। তারা সবাই গান গাইছে আনন্দে। সারা বনে কিচিরমিচির। ভালুক শুধু একা এই নতুন দিনের আনন্দে যোগ দিতে পারছে না।

সাত সকালে সেই খরগোশের সঙ্গে ভালুকের দেখা। একা একা হাঁটছে ভালুক, পা টলছে তার। কুব কষ্ট করে সে চোখের পাতা খুলে রখেছে। না ঘুমিয়ে শরীর তার ভারী হয়ে রয়েছে।

খরগোশ তাই দেখে মিটিমিটি হাসল। শক্তি বেড়াই দেখিয়েছিল ভালুক। উচিৎ সাজা পেয়েছে এখন। এমন সময় এল সেই মশা।

খরগোশ বলল, “ধন্যবাদ মশা ভাই, কী দিয়ে যে আপ্যায়ন করব!”

মশা মুখ টিপে হাসল, “ভালুকের অবস্থা তো দেখলে। আহা বেচারা!”

“দেখছি। কী যে হাসি পাচ্ছে আমার।” খরগোশ হাসতে হাসতে এলিয়ে পড়ল।

‘দেখলে তো? ছোট আর দুর্বল হয়েছি বলে কী হবে, বুদ্ধির প্যাঁচে ফেলে কীরকম নাস্তানাবুদ করলাম ভালুককে!’

বলেই মশা উড়ে গেল। আর ছড়িয়ে দিল তার গানের রেশ, পুন্... পুন্...।

COMMENTS

Name

Andrew-Kishore,1,অগ্নিপুরুষ,10,অনীশ,2,অন্য-ভুবন,3,আজ-হিমুর-বিয়ে,3,আবু-ইসহাক,1,আমি-এবং-আমরা,3,আমিই-মিসির-আলি,3,উপন্যাস,15,উপেন্দ্রকিশোর-রায়চৌধুরী,2,একজন-হিমু-কয়েকটি-ঝিঁঝিঁ-পোকা,5,এবং-হিমু,5,কবিতা,2,কহেন-কবি-কালিদাস,2,কাজী-আনোয়ার-হোসেন,18,কাজী-নজরুল-ইসলাম,2,গজল,1,গল্প,3,গানের-লিরিক,9,চলে-যায়-বসন্তের-দিন,3,চোখ,1,ছোট-গল্প,35,ছোটদের-গল্প,17,জলের-গান,1,জেমস,2,তন্দ্রাবিলাস,3,তোমাদের-এই-নগরে,4,দক্ষিণারঞ্জন-মিত্র-মজুমদার,1,দরজার-ওপাশে,4,দেবী,7,দেশাত্ববোধক-কবিতা,1,দেশাত্ববোধক-গান,2,নিশীথিনী,4,নিষাদ,3,পঞ্চতন্ত্র,1,পাগলা-দাশু,4,পারাপার,4,পুফি,3,বইয়ের-তালিকা,1,বাঘবন্দি,3,বিখ্যাত-গান,3,বিপদ,2,বৃহন্নলা,2,ভয়,5,মজার-গল্প,23,ময়ূরাক্ষী,4,ময়ূরাক্ষীর-তীরে-প্রথম-হিমু,1,মাসুদ-রানা,18,মিসির-আলি-UNSOLVED,4,মিসির-আলি-আপনি-কোথায়,3,মিসির-আলি-সমগ্র,55,মিসির-আলির-অমিমাংসিত-রহস্য,3,মিসির-আলির-চশমা,3,মুহম্মদ-জাফর-ইকবাল,1,মোশতাক-আহমেদ,1,মোহাম্মাদ-জসীম-উদ্দীন-মোল্লা,2,যখন-নামিবে-আঁধার,2,রবীন্দ্রনাথ-ঠাকুর,3,রম্যগল্প,4,রাধারানী-দেবী,1,রুপকথার-গল্প,4,শরৎচন্দ্র-চট্টোপাধ্যায়,2,শেখ-আবদুল-হাকীম,8,শ্রী-ক্ষিতীশচন্দ্র-কুশারী,1,সায়েন্স-ফিকশন,1,সুকুমার-রায়,7,সে-আসে-ধীরে,4,সেবা-প্রকাশনী,4,সৈয়দ-মুজতবা-আলী,1,স্বর্ণদ্বীপ,7,হরতন-ইশকাপন,2,হলুদ-হিমু-কালো-RAB,6,হাসির-গল্প,23,হিমু-এবং-একটি-রাশিয়ান-পরী,3,হিমু-এবং-হার্ভার্ড-PhD-বল্টু-ভাই,7,হিমু-মামা,6,হিমু-রিমান্ডে,9,হিমু-সমগ্র,80,হিমুর-দ্বিতীয়-প্রহর,3,হিমুর-বাবার-কথামালা,8,হুমায়ূন-আহমেদ,135,
ltr
item
গল্প এর বই: নরওয়ের রূপকথা || রুপকথার গল্প
নরওয়ের রূপকথা || রুপকথার গল্প
নরওয়ের রূপকথার গল্পগুলো পড়ুন- ১. এক যে ছিল ছাগলছানা ২. অহংকারী খরগোশ ৩. সাতটি ছাগল ছানা ৪. ভালুকের বড়াই
গল্প এর বই
https://golpoerboi.blogspot.com/2021/06/norowayer-rupkothar-golpo.html
https://golpoerboi.blogspot.com/
https://golpoerboi.blogspot.com/
https://golpoerboi.blogspot.com/2021/06/norowayer-rupkothar-golpo.html
true
2280349116972597382
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content