টুকি ও ঝায়ের (প্রায়) দুঃসাহসিক অভিযান - মুহম্মদ জাফর ইকবাল

টুকি এবং ঝা দুজনকে মিলিয়ে মোটামুটিভাবে একজন পুরো মানুষ তৈরি করা যায়। টুকি শুকনো কাঠির মতন, তার শরীরে মেদ বা চর্বি দূরে থাকুক প্রয়োজনীয় মাংসটুকুও নেই,

 প্রথম পর্ব 

সায়েন্স ফিকশন সমগ্র থেকে


টুকি ও ঝায়ের (প্রায়) দুঃসাহসিক অভিযান - মুহম্মদ জাফর ইকবাল 


নিবেদন

আমার মাঝে মাঝেই সায়েন্স ফিকশান নিয়ে কৌতুক করে কিছু একটা লেখার ইচ্ছে করে, টুকি এবং ঝায়ের (প্রায়) দুঃসাহসিক অভিযান বইটি সেরকম একটা ইচ্ছে থেকে লেখা। যারা গোড়া সায়েন্স ফিকশান ভক্ত তারা আমার এরকম লেখা দেখে খুব বিরক্ত হন। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। অনুপম প্রকাশনী থেকে এই বইটি নূতন করে প্রকাশ করা উপলক্ষে অনেকদিন পর আবার পড়ার সুযোগ হলো–এরকম কাহিনী যে আরো অনেকবার লিখতে হবে সেই ব্যাপারটি আবারো নিশ্চিত হলো।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল

১০/৮/০৪

———–

পূর্ব কথা

টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। সেই বৃষ্টিতে দুজন মানুষ অন্ধকারে উবু হয়ে বসে আছে। একজনের নাম টুকি। অন্যজনের নাম ঝা। তাদের সামনে আবছা অন্ধকারে উঁচু মতন কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। উপরে হঠাৎ একটা আলো জ্বলে উঠে নিভে যেতেই দুজনেই চমকে উঠল। টুকির মনে হল ঘটনাটা আগে ঘটেছে, কিন্তু কবে ঘটেছে কোথায় ঘটেছে কিছুতেই সে মনে করতে পারল না। ভয় পাওয়া গলায় বলল, ওটা কী?

———–

০১.

টুকি এবং ঝা দুজনকে মিলিয়ে মোটামুটিভাবে একজন পুরো মানুষ তৈরি করা যায়। টুকি শুকনো কাঠির মতন, তার শরীরে মেদ বা চর্বি দূরে থাকুক প্রয়োজনীয় মাংসটুকুও নেই, যেটুকু থাকা প্রয়োজন ছিল সেটা জমা হয়েছে ঝায়ের শরীরে—সে দেখতে একটা ছোটখাট পাহাড়ের মতন। টুকির নাকের নিচে বিশাল গোফ সেটাও খুব সহজে ঝায়ের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়া যেতো। বুদ্ধি শুদ্ধির ব্যাপারগুলোও দুজনের মাঝে ঠিক করে ভাগাভাগি করা হয় নি, ঝায়ের ভাগে বেশ কম পড়েছে এবং সেটুকু মনে হয় টুকি পুষিয়ে নিয়েছে। কোন একটা কিছু বুঝতে যখন ঝায়ের অনেক সময় লেগে যায় সেটা টুকি চোখের পলকে বুঝে নেয়। শুধু তাই নয়, যেটুকু না বুঝলেও ক্ষতি নেই কিংবা যেটুকু বোঝা উচিত নয় সেটাও সে বুঝে ফেলে পুরো জিনিসটাতেই একটা বিদঘুটে ঘোট পাকিয়ে ফেলে। চরিত্রের অন্যান্য দিকগুলোতেও তাই—টুকি হাসি তামাশার মাঝে নেই, কোন একটি হাসির দৃশ্য দেখেও সে এর মাঝে হাসার কোন কিছু খুঁজে পায় না। রসিকতার পুরো ব্যাপারটি পেয়েছে ঝা, অত্যন্ত কাঠখোট্টা একটা দৃশ্য দেখেও ঝা তার সমস্ত শরীর দুলিয়ে হা হা করে হাসতে শুরু করে। টুকি সন্দেহপ্রবণ মানুষ কোন কিছুকেই সে বিশ্বাস করে না, ঝা সাদাসিধে সহজ সরল, তাকে দশবার বিক্রি করে দিলেও সেটা নিয়ে কোন রকম আপত্তি করবে না। টুকি বদরাগী—চট করে ক্ষেপে গিয়ে হঠাৎ হঠাৎ একটা কাণ্ড করে বসে, ঝা মোটামুটি মাটির মানুষ, প্রয়োজনের সময়েও সে রেগে উঠতে পারে না।

চেহারা ছবি চালচলন বা চরিত্রের কোন দিক দিয়ে তাদের কোন মিল না থাকলেও একটা ব্যাপারে দুজনের মিল রয়েছে, তারা দুজনেই চোর। ছোটখাট ছিচকে চোর নয় রীতিমতো চোরের বিশেষ কলেজ থেকে পাস করা ডিপ্লোমাধারী পেশাদার চোর। ইন্টার গ্যালাক্টিক বুলেটিন বোর্ডে তাদের নাম পরিচয় প্রায়ই ছাপা হয়। পুলিশ সব সময়েই হন্যে হয়ে তাদের খোঁজাখুঁজি করছে এবং তারা দুজনেই সব সময় পুলিশ থেকে এক ধাপ এগিয়ে থেকে নিজেদের রক্ষা করে চলেছে। শৈশবে টুকি এবং ঝা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের প্রটোনিয়াম বা প্রতিরক্ষা দফতরের সফটওয়ার চুরি করে হাত পাকিয়েছে। যৌবনে আন্তঃগ্যালাক্টিক সন্ত্রাসী দলের জন্যে পারমাণবিক বোমা চুরি করেছে। এখন দুজনেরই মধ্যবয়স, উত্তেজক জিনিসপত্রে উৎসাহ নেই, ইদানীং মূল্যবান রত্নের দিকে ঝুকে পড়েছে। সত্যি কথা বলতে কী বড় একটা দাও মেরে চুরি-চামারী ছেড়ে দিয়ে নিরিবিলি কোন একটা গ্রহে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবার জন্যে আজকাল মাঝে মাঝেই দুজনের মন উসখুস করে।

সেই অর্থে আজকের চুরির প্রজেক্টটা টুকি এবং ঝা দুজনের জন্যেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেন্ট্রাল ব্যাংকের ভল্টে দুইশ চব্বিশ ক্যারটের হীরা এসেছে খবরটা সোলার-নেটে দেখার পর থেকে দুজনেই সেটা গাপ করে দেবার তালে ছিল। খোঁজ-খবর নিয়ে টুকি আর ঝা বসে বসে নিখুঁত পরিকল্পনা করেছে। জেট চালিত জুতো পরে দেওয়াল বেয়ে উঠে গেছে, মাইক্রো-এক্সপ্লোসিভ দিয়ে দেওয়াল ফুটো করেছে, এক্স-রে লেজার দিয়ে ভল্ট কেটেছে, রিকিভ সিস্টেমে লেখা কম্পিউটার ভাইরাস দিয়ে সিকিউরিটি সিস্টেম নষ্ট করেছে, তারপর দুইশ চব্বিশ ক্যারটের বিশাল হীরাগুলো নিয়ে সরে এসেছে। পুরো ব্যাপারটা একেবারে নিখুঁতভাবে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করছিল কিন্তু একেবারে শেষ। মুহূর্তে একটা ঝামেলা হয়ে গেল। দুশো চুরানব্বই তালা দালানের একশ বিরাশি তালায় এসে ঝায়ের বাথরুম পেয়ে গেল। সেখানে বাথরুম খুঁজে বের করে কাজ সেরে নিচে নেমে আসতে আসতে দেখে ততক্ষণে সিকিউরিটি সিস্টেম খবর। পেয়ে গেছে। সেন্ট্রাল ব্যাংকটা ঘিরে প্রায় এক ডজন পুলিশের গাড়ি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

টুকি এবং ঝা তখন জেট চালিত জুতা ব্যবহার করে লাফিয়ে গাড়িতে উঠে বসে পালানোর চেষ্টা করেছে। পুলিশকে ধোকা দেওয়ার তাদের আধ ডজন। প্রোগ্রাম রেডী করা থাকে। দেখতে নিরীহ দর্শন গাড়িটি আসলে একটা ভাসমান। গাড়ি, নিচু হয়ে উড়তে পারে। সেটায় চড়ে তারা তাদের আধডজন প্রোগ্রাম ব্যবহার করেও পুলিশকে কোনভাবে খসাতে পারল না। তখন আর কোন উপায় না দেখে তাদের শেষ অস্ত্রটা ব্যবহার করতে হল, তাদের ভাসমান গাড়িটিকে একসিডেন্টের ভান করে ধ্বংস করে দেওয়া হল। আগে থেকেই সেখানে তাদের জামা কাপড় পরানো সত্যিকার টিস্যু দিয়ে তৈরি তাদের চেহারার এক জোড়া রবোট বসানো আছে, পুলিশ এই মুহূর্তে সেগুলোকে ধরে নানাভাবে জেরা করছে আর সেই ফাকে তারা সরে এসেছে।

লুকিয়ে লুকিয়ে টুকি এবং ঝা যে জায়গায় এসে হাজির হয়েছে সেটি জংলা এবং নির্জন। বুকে ভর দিয়ে নিজেদের হাচড় পাচড় করে টেনে টেনে তারা প্রায়। কয়েক কিলোমিটার চলে এসেছে। কনুইয়ের ছাল উঠে গেছে, ঝোপঝাড়ের খোঁচা খেয়ে খেয়ে মুখের জায়গায় জায়গায় কেটে গেছে, বিছুটি জাতীয় একটা গাছ ভুল করে ছুয়ে ফেলায় টুকির সারা শরীর চুলকাচ্ছে, কাদা পানিতে দুজনেই মাখামাখি এবং খুব সঙ্গত কারণেই টুকির মেজাজ বাড়াবাড়ি রকম খারাপ হয়ে আছে। সে প্রায় একশ বাহান্নবারের মত ঝাকে গালি দিয়ে বলল, রবোটের বাচ্চা রবোট কোথাকার, সাত মাত্রার অপারেশনে কেউ বাথরুমে যায়?

ঝা ছোটখাট ঝোপঝাড়কে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে নিজেকে ছেড়ে ছেচড়ে সামনে নিতে নিতে বলল, আমি কী করব? তুমি জান সিনথেটিক গলদা চিংড়ি আমার পেটে সয় না।

পেটে সয় না তো এতগুলো খেলে কেন?

মনোসোডিয়াম গ্লুকোমেট দিয়ে ঝাল করে বেঁধেছে। জিবের স্বাদ বেড়ে গেল হঠাৎ—

টুকি রেগেমেগে আরেকটা কী বলতে যাচ্ছিল, ঠিক তখন বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। প্যাচপ্যাচে কাদায় আধডোবা হয়ে থেকে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, একেই বলে কপাল। এখন এর মাঝে বৃষ্টি শুরু হল।

ঝা হাসি হাসি মুখে বলল, মৌসুমী বৃষ্টি। একেবারে সময়মত এসেছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিউশান একেবারে ধুয়ে নিয়ে যাবে।

টুকি রেগেমেগে বলল, তোমার বৃষ্টির চৌদ্দগুষ্ঠির লিভারে ক্যান্সার হোক।

ঝা মুখের হাসিকে আরো বিস্তৃত করে বলল, এত রেগে যাচ্ছ কেন? কী চমৎকার বৃষ্টি, দেখ না একবার। তিন চার ঘণ্টার মাঝে থেমে যাবে।

তিন চার ঘণ্টা! টুকি মুখ খিচিয়ে বলল, ততক্ষণ আমরা কী করব?

ভিজব। মঙ্গল গ্রহে বৃষ্টিতে ভেজার একটা ট্যুর আছে। সাড়ে সাতশ ইউনিট দিলে দশ মিনিট ভিজতে দেয়। সিনথেটিক বৃষ্টি। আর এইটা হল একেবারে খাঁটি প্রাকৃতিক বৃষ্টি।

টুকি রেগেমেগে আবার কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল। সামনে আবছা অন্ধকারে উঁচু মতন কিছু একটা দেখা যাচ্ছে উপরে হঠাৎ আলো জ্বলে উঠে আবার নিভে গেল। টুকি ভয় পাওয়া গলায় বলল, ওটা কী?

ঝা পকেট থেকে বাইনোকুলার বের করে চোখে লাগিয়ে খানিকক্ষণ দেখে বলল, একটা দালান।

এই জংলা জায়গায় দালান তৈরি করেছে কোন আহাম্মক? আর এইটা যদি দালানই হবে তাহলে দরজা জানালা কই?

মানুষের খেয়াল! ঝা উদাস গলায় বলল, মনে নাই নাইন্টি-নাইনে একটা বাড়িতে চুরি করলাম, পুরো বাসাটা একটা থালার মতো, ছাদ নেই।

টুকি কোন কথা না বলে উবু হয়ে বসে বলল, এটা যদি সত্যি দালান হয় তাহলে এই বৃষ্টির মাঝে আমি আর কোথাও যাচ্ছি না। আমি এই দালানে বসে বিশ্রাম নেব।

যদি কেউ থাকে? টুকি মেঘস্বরে বলল, থাকলে ঘাড় ধরে বের করে দেব।

ঝা ভয়ে ভয়ে বলল, এত কষ্ট করে এত বড় একটা দাও মারলাম আর এখন যদি ছোট খাট বৃষ্টির জন্যে ধরা পড়ে যাই

সেটা নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না। টুকি পাখির খাঁচার মত তার টিংটিংয়ে বুকে সজোরে একটা থাবা দিয়ে বলল, এই বান্দা কোনো কাঁচা কাজ করে না। ব্রেন ট্রান্সপ্ল্যান্ট আইনসিদ্ধ হলে আমার ব্রেন এতদিনে লাখ দুই লাখ ইউনিটে বিক্রি হতো।

দালানটা দেখতে নিরীহ মনে হলেও ভিতরে ঢোকা খুব সহজ হল না। দালানটা ঘিরে প্রথমে কাটাতারের বেড়া, তারপর গোপন ইলেক্ট্রিক লাইন, সবশেষে উঁচু দেওয়াল। তারা ঘাঘু চোর না হলে প্রথমেই ধরা পড়ে যেতো সে। ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। সাবধানে উঁচু দালানটার কাছে এসে তারা কোন দরজা খুঁজে পেল না। তখন মৌসুমী বৃষ্টি আরো চেপে এসেছে, অধৈর্য হয়ে এক্সরে লেজার দিয়ে কেটে একটা দরজা প্রায় বের করে ফেলছিল ঠিক তখন ঝা। দরজা খোলার গোপন ফুটোটা আবিষ্কার করে ফেলল। টুকি তার মাস্টার কী ভিতরে ঢুকিয়ে চাপ দিতেই খুট করে দরজা খুলে গেল।

ভিতরে আবছা অন্ধকার। সাধারণ ঘরবাড়ি দেখতে যেরকম হয় দালানটির ভিতরে মোটেও সেরকম নয়—এটি যন্ত্রপাতিতে বোঝাই। টুকি এবং ঝা অনেক খুঁজেও ওপরে ওঠার এলিভেটরটি খুঁজে পেল না। তখন বাধ্য হয়ে পায়ে সাকশান জুতো লাগিয়ে তারা পাইপ বেয়ে ওপরে উঠতে থাকে। খানিকদূর উঠেই অবশ্য তারা একটা সিড়ি আবিষ্কার করে, সেই সিড়ি ধরে মোটামুটিভাবে দালানটার একেবারে উপরে উঠে এল। নানা স্তরে নানা রকম ঘর পার হয়ে এলেও তারা আরাম করে বসার মত কোন জায়গা খুঁজে পেল না। যখন তারা প্রায় আশা ছেড়ে দিচ্ছিল ঠিক তখন হঠাৎ করে দুজন মানুষের কথোপকথন শুনে টুকি এবং ঝা পা টিপে টিপে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেল মাঝারী আকারের একটা ঘরে ভারী আরামদায়ক দুটি চেয়ারে প্রায় গা ড়ুবিয়ে দুজন বুড়োমানুষ খোশগল্প করছে। মানুষ দুজন টুকি এবং ঝাকে দেখে প্রায় ভূত দেখার মত চমকে উঠে বলল, তোমরা কে?

টুকি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই বুড়োমতন একজন ধমক দেয়ার মত করে বলল, তোমরা এখানে কী করছ?

টুকি এবং ঝা পেশাদার চোর, তাদের সব কাজকর্ম হয় মানুষের অগোচরে। এরা সাধারণত মানুষের দেখা পায় না এবং হঠাৎ করে কোন মানুষ ধমকে। উঠলে খুব স্বাভাবিক কারণেই তারা ভয় পেয়ে যায়। এবারও দুজনেই ভিতরে ভিতরে একটু ভয় পেয়ে গেল, টুকি ভয়টা গোপন করে তার ব্যাগ থেকে মাঝারী আকারের একটা অস্ত্র বের করে গলার স্বর মোটা করে বলল, একটা কথা বললে ঘিলু বের করে দেব।

ঝা অস্ত্রটার দিকে এক নজর তাকিয়ে চাপা গলায় বলল, এটা তো ট্রাংকুলাইজার গান। এটা দিয়ে কী ঘিলু বের হবে?

টুকি এবারে ঝায়ের দিকে তাকিয়ে একটা বাজখাই ধমক দিয়ে বলল, চুপ কর তুমি।

বুড়ো মানুষদের একজন বলল, কিন্তু–

টুকির ধমক খেয়ে ঝায়ের মেজাজটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল এবারে সে মনের ঝাল মেটালো মানুষগুলোর উপরে, চিৎকার করে বলল, কোন কথা নয়। এক দাবড়া দিয়ে মাথা ভেঙ্গে দেব।

মানুষটা তখনো কিছু একটা বলার চেষ্টা করল। বলল, কিন্তু—

ঝা তখন অঙ্গভঙ্গী করে মাথা ভেঙ্গে ফেলে দেবার ভাণ করে দাঁত কিড়মিড় করে এগিয়ে যায় এবং সেটা দেখে টুকি পর্যন্ত একটু ঘাবড়ে গিয়ে কী করবে বুঝতে না পেরে গুলি করে বসল। ট্রাংকুয়ালাইজার গানের গুলি খেয়ে মানুষ দুজন ফোঁস জাতীয় একটা শব্দ করে সাথে সাথে গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল। ঘুম যে গাঢ় সেটি প্রমাণ করার জন্যেই সম্ভবত সাথে সাথে তাদের নাক ডাকতে শুরু করে।

ঝা তার মুখে ভয়ংকর অঙ্গভঙ্গীটি ধরে রেখে বলল, কী হল, মরে গেল নাকী?

মরবে কেন? টুকি বিরক্ত হয়ে বলল, ট্রাঙ্কুলাইজার গানের গুলি খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। দেখছ না নাক ডাকছে।

ঝা ঠিক বুঝতে পারল না মুখে ভয়ংকর ভঙ্গীটি ধরে রাখবে কী না, দ্বিধান্বিত হয়ে খানিকটা প্রশ্নের ভঙ্গীতে টুকির দিকে তাকাল। টুকি তার অস্ত্রটি ব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে বলল, যাও, এদের বাইরে রেখে এস।

ঝা অবাক হয়ে বলল, কেন?

শুনতে পাচ্ছ না জেট ইঞ্জিনের মত নাক ডাকছে? কেউ কানের কাছে এভাবে নাক ডাকলে বিশ্রাম নেওয়া যায়?।

ঝা ইতস্তত করে বলল, কিন্তু আমার একটু বাথরুমে যাওয়ার দরকার ছিল। সিনথেটিক গলদা চিংড়িগুলো পেটের মাঝে–

যেতে তোমাকে না করছে কে? মানুষগুলোকে বাইরে রেখে বাথরুমে কেন। ইচ্ছে হলে নরকে চলে যাও।

ঝা খুব বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে থাকা বুড়ো মানুষ দুটির সার্টের কলার ধরে টেনে টেনে ঘরের বাইরে নিয়ে গেল। টুকি নরম চেয়ারে গা ড়ুবিয়ে বসে সামনে রাখা বিশাল ভিডিও স্ক্রীনের টেলিভিষণটি চালু করার চেষ্টা করতে থাকে। এরকম সময়ে পাবলিক চ্যানেলগুলোতে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠান হয়। বড় ধরনের কিছু একটা চুরি করে এসে সে সব সময় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শুনে তার স্নায়ুকে শীতল করে। থাকে। এখন সে চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত দূরে থাকুক কোন ধরনের। অনুষ্ঠানই শুনতে পেল না, সব চ্যানেলেই নানা ধরনের দুর্বোধ্য যান্ত্রিক ছবি। টুকি বিরক্ত হয়ে টেলিভিষণ বন্ধ করে দেয়।

মানুষ দুটিকে বাইরে রেখে ফিরে আসতে ঝায়ের খুব বেশি সময় লাগার। কথা নয় কিন্তু দেখা গেল তার কোন দেখা নেই। অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে কী করবে বুঝতে না পেরে টুকি তার নরম চেয়ার থেকে উঠে ঘরটাতে পায়চারী শুরু করে এবং ঠিক তখন সে আবিষ্কার করল ঘরের এক কোনায় একটি রবোট চুপ করে দাঁড়িয়ে তার দিকে সবুজ ফটোসেলের চোখে তাকিয়ে আছে। টুকি প্রথমে চমকে উঠল তারপর সাহসে ভর করে কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, এই রবোট–

রবোটটি কোন কথা না বলে কয়েকবার চোখ পিট পিট করল। টুকি আবার বলল, এই রবোট—কথা বলছ না কেন?

রবোটটি এবারেও প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চোখ দুটি আরও কয়েকবার পিট পিট করল। টুকি যখন তৃতীয়বার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে কী না চিন্তা করছে ঠিক তখন ঝা ঘরে এসে ঢুকল। সে ভিজে জবজবে হয়ে আছে। টুকি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, সে কী! তুমি ভিজলে কেমন করে?

বাইরে যা বৃষ্টি! ভিজব না?

টুকি চোখ কপালে তুলে বলল, এই বৃষ্টিতে তুমি বাইরে গেলে কেন?

তুমি না বললে মানুষগুলিকে বাইরে রেখে আসতে!

আরে রবোটের বাচ্চা—আমি বলেছিলাম ঘরের বাইরে!

ঝা খানিকক্ষণ হা করে থেকে অপ্রস্তুতের মত বলল, আমি ভেবেছি তুমি বলেছ বিল্ডিংয়ের বাইরে—

ঠিক এই সময়ে সমস্ত বিল্ডিংটা মৃদু মৃদু কাঁপতে শুরু করে এবং কোথায়। জানি একটা মৃদু গুঞ্জন শোনা যায়। সামনের বড় ভিডিও স্ক্রিনগুলোতে বিচিত্র সব নকশা খেলা করতে থাকে। ঝা মাথা নেড়ে বলল, এই বিল্ডিংয়ের সবকিছু। আজব। কেমন শব্দ করছে দেখছ?

টুকি মাথা নাড়ল। ঝা বলল, সারা বিল্ডিংয়ে কোন বাথরুম নেই। বাথরুম নেই?

না! একটা আছে সেটা উল্টো।

টুকি অবাক হয়ে বলল, উল্টো?

হ্যাঁ! ছাদ থেকে ঝুলছে। এটা কী ধরনের ফাজলেমো? আমরা কী উড়ে উড়ে গিয়ে বাথরুম করব?

টুকি খানিকক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঝায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ভয়ানক চমকে উঠে বলল, সর্বনাশ!

ঝা ভয় পেয়ে বলল, কী হয়েছে?

পালাও! এখান থেকে পালাও।

কেন? কী হয়েছে?

বুঝতে পারছ না? এইটা একটা মহাকাশযান।

মহাকাশযান?

হ্যাঁ! মহাকাশযান। মহাকাশযানে কোন সোজা উল্টো নেই। সেখানে মহাকর্ষ নেই বলে সবকিছু ভাসতে থাকে। এটাও নিশ্চয়ই মহাকাশে যাবে। শুনতে পাচ্ছ না ইঞ্জিন চালু হয়েছে?

ঝা কান পেতে শুনল সত্যি সত্যি গুম গুম করে ইঞ্জিন শব্দ করছে। সে ফ্যাকাশে মুখে বলল, যে দুজনকে বাইরে রেখে এসেছি তারা মহাকাশচারী?

হ্যাঁ!

সর্বনাশ।

নিচে চল, বের হতে হবে এখান থেকে।

টুকি বিদ্যুবেগে নিচে ছুটতে থাকে, পিছনে পিছনে ঝ। ছুটতে ছুটতে তারা শুনতে পায় ইঞ্জিনের শব্দটা বাড়ছে, দেয়াল মেঝে ছাদ সবকিছু কাঁপতে শুরু করেছে। কোন রকমে নিচে এসে দরজা খোলার জন্যে হ্যান্ডেলে হাত রাখতেই হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ শোনা গেল এবং হঠাৎ করে তারা বুঝতে পারল মহাকাশযানটি উপরে উঠতে শুরু করেছে। টুকি এবং ঝা হুঁমড়ি খেয়ে পড়ল এবং তাদের মনে হতে লাগল অদৃশ্য একটা শক্তি তাদেরকে মেঝের সাথে চেপে ধরে রেখেছে। ঝা কোনমতে বলল, নড়তে পারছি না।

পারবে না! দশ জি এক্সেলেরেশান।

ঝা টুকির দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার বয়স বেড়ে যাচ্ছে! সর্বনাশ মুখের চামড়া নিচে ঝুলে যাচ্ছে।

টুকি রেগে বলল, বয়স নয় রবোটের বাচ্চা কোথাকার–এক্সেলেরেশানে চামড়া ঝুলে যাচ্ছে।

কী অদ্ভুত লাগছে তোমাকে!

তোমাকেও খুব সুন্দর দেখাচ্ছে না। টুকি চেষ্টা করে একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, সব দোষ তোমার। তুমি যদি একশ বিরাশি তালার বাথরুমে না যেতে–

দোষ আমার? তুমি যদি এই বিল্ডিংয়ে না আসতে–

ঝায়ের কথা তার মুখে আটকে গেল। মহাকাশযানটি এখন প্রচণ্ড বেগে উপরে উঠছে তার ভয়ংকর ভূরণে দুজনের চোখের সামনে একটা লাল পর্দা ঝুলতে থাকে। সেই লাল পর্দা গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে একসময় অন্ধকার হয়ে আসে। জ্ঞান হারানোর আগের মুহূর্তে শুনল রিনরিনে গলায় কে যেন বলল, এম, সেভেন্টি ওয়ানে মানুষের তৃতীয় কলোনীতে আপনাদের ভ্রমণ আনন্দময় হোক।

টুকি অনেক কষ্টে চোখ খুলে তাকাল। উপরে নিশ্চল হয়ে দাঁড়ানো রবোটটি কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে বলল, আপনারা আপনাদের জন্যে নির্দিষ্ট চেয়ারে না বসে মেঝেতে চ্যাপটা হয়ে কেন শুয়ে আছেন আমি জানি না।

টুকি চাপা গলায় বলল, চুপ কর হতভাগা।

আপনারা যদি আপনাদের জন্যে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে থাকতেন তাহলে আপনাদের বর্তমান শারীরিক যন্ত্রণা উপশম করার জন্যে মস্তিষ্কে বিশেষ তরঙ্গ পাঠানো যেত। কিন্তু এখন কিছু করার নেই। আপনাদের উপরে তুলে নেওয়া প্রায় অসম্ভব।

ঝা চিঁ চিঁ করে বলল, কেন?

আপনার স্বাভাবিক ওজনই একশ পঞ্চাশ কেজির কাছাকাছি। এখন আপনার ওজন দাঁড়িয়েছে দেড় হাজার কে জ্বি।

কতক্ষণ এরকম থাকবে?

বেশ অনেক্ষণ।

কষ্ট কী আরো বাড়বে।

কষ্ট এখনো শুরু হয়নি। কিছুক্ষণের মাঝে শুরু হবে।

ঝা কাতর গলায় বলল, কিছু কী করা যায় না?

একটা উপায় আছে। আপনাদের মাথায় আঘাত দিয়ে অচেতন করে দেওয়া। তাহলে কিছু টের পাবেন না।

টুকি এবং ঝা প্রবল বেগে মাথা নেড়ে নিষেধ করার চেষ্টা করল কিন্তু অদৃশ্য কোন একটা শক্তি এত জোরে তাদেরকে মেঝের সাথে চেপে ধরে রেখেছে যে শরীরের একটা মাংসপেশীও এতটুকু নাড়াতে পারল না। টুকি এবং ঝা অনেক কষ্টে চোখ খুলে আতংকে নীল হয়ে দেখল রবোর্টটি বড় সাইজের একটা গদা নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।

ভয়ে, গদার আঘাতে নাকী মহাকাশযানের প্রচণ্ড গতিবেগের ত্বরণের কারণে তারা জ্ঞান হারিয়েছে সেটা টুকি কিংবা ঝা কারো মনে নেই।

জ্ঞান ফিরে ঝা আবিষ্কার করল মাধ্যাকর্ষণহীন একটা ঘরে সে ভেসে বেড়াচ্ছে। পরে সুমসাম নীরবতা। মাথা ঘুরিয়ে দেখল টুকিও ভাসতে ভাসতে কুলী পাকিয়ে ঘুমাচ্ছে, কপালের কাছে খানিকটা জায়গা আলুর মত ফুলে আছে নিশ্চয়ই সেখানে রবোটের বাচ্চা রবোট গদা দিয়ে মেরেছিল। ঝা টুকিকে জাগিয়ে তোলার জন্যে তার কাছে যেতে চাইল কিন্তু ব্যাপারটা সোজা নয়। ঝা এক জায়গায় হাড় পাচড় করতে থাকে কিন্তু এক সেন্টিমিটার সামনেও এগুতে পারে না।

আপনি কি ব্যায়াম করছেন? আমি কখনো কাউকে ব্যায়াম করতে দেখিনি।

গলার স্বর শুনে ঝা নিচে তাকাল, সেখানে সোজা হয়ে রবোটটি দাঁড়িয়ে আছে। রাগ চেপে বলল, না আমি ব্যায়াম করছি না। আমি সামনে যাবার চেষ্টা করছি।

সামনে যেতে হলে আপনাকে পিছনে ধাক্কা দিতে হবে। প্রাচীন বিজ্ঞানী নিউটন ভরবেগের সাম্যতার এই সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন। পিছনে ধাক্কা দিলে প্রতিক্রিয়া হিসেবে সামনে একটি ক্রিয়া হয়। সেই ক্রিয়াতে–

ঝা ঠাণ্ডা মেজাজের মানুষ, সাধারণত রাগ করে না, এবারে রেগে উঠে বলল, চুপ কর হতভাগা, না হয় এক রদ্দা দিয়ে ঘিলু বের করে দেব।

রবোটটি তার গলার স্বরে এক ধরনের উৎফুল্ল ভাব ফুটিয়ে বলল, আপনি কী রাগ করছেন? আমি কখনো কাউকে রাগ করতে দেখিনি। রবোট ফার্মে আমার বন্ধুরা বলেছে মানুষ যখন রাগ হয় তখন নাকী তারা বিচিত্র সব কাজকর্ম করে। সেটা দেখা নাকী অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। আপনি আরও একটু রাগ করবেন? আমি আবার দেখি।

ঝা চোখ পাকিয়ে রবোটটার দিকে তাকিয়ে পা দিয়ে কাছাকাছি একটা দেওয়ালে ধাক্কা দিয়ে টুকির দিকে এগিয়ে গেল। কাছে এসে তাকে বার কতক ঝাকুনি দিতেই সে চোখ খুলে চিৎকার করে বলল, ধরা পরে গেছি? পুলিশ এসে গেছে?

না, ঝা মাথা নেড়ে বলল, ধরা পড়ি নি। কিন্তু ধরা পরলেই অনেক ভাল ছিল। আমরা এখন মহাকাশে।

টুকির সব কথা মনে পড়ে গেল এবং সে সাথে সাথে ধড়মড় করে উঠে বসার চেষ্টা করতে থাকে। শূন্যে ভাসমান অবস্থায় ধড়মড় করে উঠে বসা যায় না। কাজেই টুকি ওলট পালট খেয়ে এক জায়গায় ঘুরতে শুরু করল, তাকে থামাতে গিয়ে ঝাও একই জায়গায় ওলট পালট খেতে লাগল। রবোটটি নিচে দাঁড়িয়ে বলল, মানুষ প্রজাতির নির্বোধ কাজ দেখা বড় আনন্দের।

টুকি কোন মতে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল, ব্যাটা রবোটের বাচ্চা তুই ভাসছিস না কেন? সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেমন করে?

আমার পায়ে রয়েছে বিশেষ সাকশান জুতো।

তাহলে আমাদের সেই জুতো দিচ্ছিস না কেন?

আপনারা চাইছেন না তাই দিচ্ছি না।

ঠিক আছে এখন চাইলাম।

এক্ষুণি এনে দিচ্ছি। আপনাদের পায়ের সাইজ যেন কত?

কিছুক্ষণের মাঝেই টুকি এবং ঝা তাদের পায়ে সাকশান জুতো পরে মেঝেতে স্থির হল। প্রথমেই তারা জানার চেষ্টা করল এই মুহূর্তে মহাকাশযানটা কোথায় আছে এবং কোনদিকে যাচ্ছে। রবোটটিকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, আমি জানি কিন্তু বলব না।

কেন বলবে না?

এটি একটি গোপন প্রজেক্ট।

রবোটের বাচ্চা রবোট—এই গোপন প্রজেক্টে আমরা বসে আছি আর আমরা জানতে পারব না কোথায় যাচ্ছি?

আমি রবোটের বাচ্চা নই–রবোটটি মাথা নেড়ে বলল, আমার নাম রোবি।

ঐ একই কথা।

এক কথা নয়। রবোটের বাচ্চা রবোট সম্পূর্ণ অর্থহীন কথা। রবোটের বিয়ে হয় না এবং রবোটের বাচ্চা হয় না। আমার নাম রোবি।

ঠিক আছে ঠিক আছে। রোবি, তুমি বল আমরা কোথায় যাচ্ছি।

রোবি শান্ত গলায় বলল, এটা বলা যাবে না।

টুকি দাঁত কিড়মিড় করে বলল, বলা যাবে না?

না। এই প্রজেক্টে যাদের যাওয়ার কথা ছিল আপনারা তাদের ফেলে রেখে চলে এসেছেন। আপনারা বে-আইনী। মনে হচ্ছে অনেক বড় গোলমাল পাকিয়ে দিয়েছেন।

ঝা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, এখন কী হবে?

জানি না। আমি যখন আপনাদের কথা বলেছি তখন পৃথিবীর কন্ট্রোল রুমে বিশাল হৈ চৈ শুরু হয়েছে। যিনি ডিরেক্টর তিনি মাথার চুল ছিড়তে ছিড়তে। বলেছেন, শালাদের কিলিয়ে ভর্তা বানাও।

তাই বলেছেন?

হ্যাঁ। এটাই মনে হচ্ছে অফিসিয়াল নির্দেশ। আমার আপনাদের দুজনকে কিলিয়ে ভর্তা বানাতে হবে। কখন করতে হবে জানালেই কাজ শুরু করে দেব। সেন্ট্রাল ডাটাবেস থেকে শুধু জেনে নিতে হবে কিলিয়ে কথাটার মানে কী আর

ভর্তা কথাটার মানে কী। আপনারা জানেন?

টুকি রোবির শক্ত হাতের মুঠির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমরা জানি। আমরা যদি বলে দিই তাহলেও কী সেন্ট্রাল ডাটাবেস থেকে জানার দরকার আছে?

ভাল করে বুঝিয়ে দিলে দরকার হবে না।

টুকি উদাস গলায় বলল, কিলিয়ে ভত্তা করা মানে যত্ন করে রাখা–কোন অসুবিধা যেন না হয়।

ঝা যোগ করল, বিশেষ লক্ষ্য রাখা যেন খেতে কোন অসুবিধা না হয়। সিনথেটিক খাবার না দিয়ে প্রাকৃতিক খাবার। বড় বড় গলদা চিংড়ি

হ্যাঁ টুকি মাথা নাড়ল, সাথে নরম বিছানা। আর ঘুম থেকে ওঠার পর ভাল পানীয় এবং ক্লাসিক্যাল মিউজিক।।

পরিস্কার কাপড়। সিনথেটিক নয়। একশভাগ কটন।

হাল ফ্যাসন হলে ভাল হয়। ঢিলেঢালা ধরনের।

দুই ঘণ্টা পর পর নাস্তা। মেনু কী হবে আগে থেকে জানিয়ে রাখা।

গোসলের পানি হবে হালকা কুসুম কুসুম গরম।

রোবি চোখ পিট পিট করে বলল, মানুষের ভাষা বড়ই বিচিত্র। কিলিয়ে ভর্তা করা তিন শব্দের একটা বাক্য অথচ এর অর্থ কত ব্যাপক। সত্যিই বিচিত্র।

টুকি এবং ঝা একসাথে মাথা নাড়ল।

কিলিয়ে ভর্তা করার ব্যবস্থা হওয়ার পরেও টুকি এবং ঝা মনমরা হয়ে মহাকাশযানে বসে আছে। প্রথম কিছুক্ষণ মহাকাশযানের জানালা দিয়ে নীল পৃথিবীটাকে দেখা গেছে এখন আর দেখা যাচ্ছে না। মহাকাশযানের বড় বড় ইঞ্জিনগুলো চালু হয়ে সেটাকে পৃথিবী থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। সারাজীবন চুরি-চামারী করে কাটিয়েছে বলে গ্রহ নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে দেখে নি। যদি গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানটুকুও থাকত তাহলে তারা বুঝতে পারত মহাকাশযানটি মঙ্গল গ্রহের পাশ কাটিয়ে বৃহস্পতির মহাকর্ষ বলকে ব্যবহার করে একটি হাইপার ডাইভ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মহাকাশযানের ছোট ঘরটাতে তাদের কাজকর্ম বিশেষ কিছু নেই। সময় কাটানো একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্য সময় হলে টুকি এবং ঝা ঝগড়াঝাটি করে সময় কাটাতে পারত কিন্তু এখন সেটাও করতে পারছে না। প্রত্যেকবার তারা একে অপরের উপর রেগে উঠতেই রোবি গলায় তার যান্ত্রিক ধরনের আনন্দ ঢেলে বলে, কী চমঙ্কার! কী চমৎকার! আপনারা নিশ্চয়ই রাগ করছেন। আমি শুনেছি মানুষের রাগের প্রথম পর্যায়ে নাকি একে অন্যের সম্পর্কে কুৎসিত মন্তব্য করে। সেগুলি নাকি শুনতে খুব ভাল লাগে। রাগারাগির দ্বিতীয় পর্যায়ে নাকি একজন অন্যজনের নাকে হাত দিয়ে আঘাত করে। সেটি দেখলে নাকি অনেক আনন্দ হয়। কখন আপনারা একে অন্যকে আঘাত করবেন?

কাজেই যত রাগই হোক টুকি এবং ঝা চুপ করে মুখ শক্ত করে বসে থাকে। খুব যখন মন খারাপ হয় তখন তারা তাদের ঝোলা বের করে চুরি করে আনা হীরার টুকরোগুলোতে হাত বুলায়। হাতের মুঠির মত বড় বড় হীরা, কয়েকটা কাটা হয়েছে, কয়েকটা কাটা হয় নি, হাত বুলাতে তাদের বড় ভাল লাগে। পৃথিবীতে ফিরে গিয়ে এগুলো বিক্রি করে কোন একটা দ্বীপ কিনে নিয়ে মোটামুটিভাবে বাকি জীবনটা আরামে কাটিয়ে দেওয়া যাবে।

কিন্তু পৃথিবীতে ফিরে যাবে সেরকম কোন আশা এই মুহূর্তে তাদের সামনে নেই। মহাকাশযানটি বৃহস্পতি এবং নেপচুনের মাঝামাঝি এসে হাইপার ডাইভ দিয়ে সৌরজগৎ থেকে অদৃশ্য গেছে, সেটা বের হয়েছে গ্যালাক্সির অন্যপাশে সেখানকার এম সেভেন্টিওয়ান নক্ষত্রপুঞ্জে, যার আশেপাশে বসতিযোগ্য অনেকগুলো গ্রহ উপগ্রহ রয়েছে এবং যে গ্রহ-উপগ্রহগুলোতে একসময় পৃথিবীর মানুষেরা তাদের কলোনী তৈরি করেছিল।

টুকি এবং ঝা সেই কলোনীগুলোর অস্তিত্বের কথাই জানত না, কাজেই সেখানে যে বিগত দুই শতাব্দী থেকে চরম অরাজকতা চলছে সেটা জানারও তাদের কোন উপায়ই ছিল না।

শুয়ে বসে থেকে এবং ভাল খেয়ে টুকি এবং ঝায়ের স্বাস্থ্যের খানিকটা উন্নতি হল কিন্তু কিছু না করে এবং চব্বিশ ঘণ্টা রোবি নামের হাবাগোবা রবোটটার কথা শুনতে শুনতে তাদের মন মেজাজের অবস্থা হল খুব খারাপ। রোবির কপোট্রনের কানেকশান কেটে তাকে অচল করে রাখা টুকি কিংবা ঝায়ের জন্যে এমন কিছু কঠিন ব্যাপার নয় কিন্তু মহাকাশযানের কোথায় কী আছে সেগুলো রোবি ছাড়া আর কেউ জানে না বলে তাকে চলাফেরা করতে দিতে হচ্ছে।

হাইপার ডাইভ দেওয়ার দুই সপ্তাহ পর রোবির যন্ত্রণায় টুকি এবং ঝায়ের জীবন যখন মোটামুটি অসহ্য হয়ে উঠল তখন হঠাৎ করে তাদের জীবনে খানিকটা উত্তেজনা দেখা দিল। ঘুম থেকে উঠে তারা আবিষ্কার করল এই নক্ষত্রপুঞ্জের সবচেয়ে হিংস্র এবং সবচেয়ে যুদ্ধবাজ বিদ্রোহী দলটি তাদের মহাকাশযানটিকে দখল করে বিচিত্র একটি গ্রহে নামিয়ে ফেলেছে।

টুকি, ঝা এবং রোবিকে মহাকাশযান থেকে নামিয়ে বিদ্রোহী দল তাদের আস্তানায় নিয়ে যেতে থাকে। যারা তাদেরকে টেনে হিচড়ে নামিয়েছে তারা সবাই খুব উগ্র প্রকৃতির মানুষ, টুকি এবং ঝাকে গলাধাক্কা দিয়ে নামিয়ে নিতে নিতে তাদের সম্পর্কে নানা ধরনের অসম্মানজনক কথা বলতে লাগল। টুকি এবং ঝা অবশ্যি বিশেষ কিছু মনে করল না, তাদের জীবনে তারা অসংখ্যবার এরকম পরিবেশে পড়েছে। রোবি অবশ্য সারাক্ষণ তাদের জ্বালাতন করতে লাগল, পিছু পিছু হাটতে হাটতে জিজ্ঞেস করল, আপনারা কী ভয় পাচ্ছেন?

টুকি মুখ শক্ত করে বলল, পেলে পেয়েছি, তাতে তোমার বাবার কী?

না, আমি শুনেছি মানুষ খুব ভয় পেলে জামা কাপড়ে নাকি পেচ্ছাব করে দেয়। আপনারা কী পেচ্ছাব করে দিয়েছেন?

ঝা দাঁত কিড়মিড় করে বলল, না, করি নি।

কেমন করে জানেন করেন নি? হয়তো নিজের অজান্তে করে দিয়েছেন। আমি শুনেছি মানুষ নিজের অজান্তে পেচ্ছাব করে দেয়। ব্লাডার বলে একটা জিনিস থাকে, কিডনি থেকে ফিল্টার হয়ে পেচ্ছাব সেখানে এসে জমা হয়, সেটাকে যেটা কন্ট্রোল করে–

চুপ কর হতভাগা–ফিউজড বাল্ব, প্যাচ কাটা স্কু–

ঝায়ের ধমক খেয়েও রোবি নিবৃত্ত হল না, ফিসফিস করে বলল, মানুষ ভয় পেলে তাদেরকে নাকি খুব বিচিত্র দেখায়। আপনাদেরকেও বিচিত্র দেখাচ্ছে। কি মনে হয় এখন আপনাদের কি গুলি করে মারবে? তাহলে ভয় পেয়ে নিশ্চয়ই কাপড়ে পেচ্ছাব করে দেবেন। আচ্ছা, পেচ্ছাব জিনিসটা কী? তার পি. এইচ. কত? স্পেসেফিক গ্র্যাভিটি? ক্যামিকেল কম্পােজিশান? রংটা কী?

পেছন থেকে রোবির পিছনে কষে একটা লাথি মারার ইচ্ছা ঝাকে অনেক কষ্ট করে সংবরণ করতে হল।

টুকি এবং ঝাকে বিদ্রোহী দলের নেতার সামনে এনে প্রায় ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়া হল। নেতা মানুষটির বয়স খুব বেশি নয়, মাথায় বড় চুল এবং লম্বা লম্বা গোঁফ, গায়ের রং ফ্যাকাশে, চোখ দুটি ঢুলু ঢুলু এবং টকটকে লাল। ঢিলেঢালা আলখাল্লার মতো একটা ক্যাটক্যাটে হলুদ রংয়ের কাপড় পরে আছে। ঢুলু ঢুলু চোখে টুকি এবং ঝাকে এক নজর দেখে বলল, এরাই তারা?

রাগী রাগী চেহারার একজন মোটা গলায় বলল, জী হুঁজুর! তারপর সে টুকি এবং ঝায়ের পিছনে গুতো দিয়ে বলল, আমাদের নেতাকে অভিবাদন কর–

টুকি শুকনো মুখে বলল, অভিবাদন কেমন করে করে?

মাটিতে মাথা ঠেকাও। বেকুব কোথাকার।

টুকি এবং ঝা মাটিতে মাথা ঠেকাতে যাচ্ছিল তখন বিদ্রোহী দলের নেতাটি গুরুগম্ভীর গলায় বলল, তুমি বেকুব কাকে বলছ? এই দুজন হচ্ছেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ যুদ্ধ পরিচালনাকারী অস্ত্রবিজ্ঞানী রিকি এবং ফ্রাউল।

টুকি এবং ঝা চমকে উঠলো, তারা নিচু শ্রেণীর চোর, বিজ্ঞানী রিচি-ফ্রাউল নয় কিন্তু সেটা এখন বলা ঠিক হবে কী না বোঝা যাচ্ছে না।

দলের নেতা তার লম্বা গোঁফে হাত বুলিয়ে ঢুলু ঢুলু চোখকে যেটুকু সম্ভব খুলে বলল, এই দুজন অস্ত্রবিজ্ঞানীকে গোপনে আমাদের এম সেভেন্টিওয়ান এলাকায় পাঠানো হয়েছে। আমরা তাদের ধরে ফেলেছি, এখন তাদেরকে কত দামে গ্যালাক্টিক হাই কমাণ্ডের কছে বিক্রি করতে পারব চিন্তা করে দেখেছ কেউ?

যে মানুষটি টুকি এবং ঝাকে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে অভিবাদন করার জন্যে পীড়াপিড়ি করছিল, সে এবারে খুব কাচুমাচু হয়ে পড়ল। মাথা নিচু করে বলল, বুঝতে পারি নাই স্যার—একেবারে চোরের মত চেহারা ছবি–

চুপ কর বেয়াদপ। এক্ষুনি বিজ্ঞানী রিচি আর ফ্রাউলের পায়ে চুমু খেয়ে ক্ষমা চাও।

যারা টুকি এবং ঝাকে মহাকাশযান থেকে ধরে এনেছে তাদের অনেকেই এবার উবু হয়ে টুকি এবং ঝায়ের পায়ে চুমু খাবার চেষ্টা করতে লাগল। ঝা মোটামুটি হতবাক হয়ে ব্যাপারটা দেখছিল টুকি ততক্ষণে খানিকটা আন্দাজ করতে পেরেছে। বৃষ্টির রাতে আশ্রয় নেবার জন্যে মহাকাশযানে উঠে বুড়োমতন যে দুজন বদরাগী মানুষকে বৃষ্টির মাঝে বাইরে ফেলে এসেছিল তারাই নিশ্চয় বিজ্ঞানী রিচি আর ফ্রাউল। তারা সেই মহাকাশযানটিতে করে এসেছে বলে তাদেরকেই মনে করছে অস্ত্রবিজ্ঞানী রিচি আর ফ্রাউল। এই রকম মাথা গরম বিদ্রোহী দলকে সত্যি কথাটা তাড়াতাড়ি বলে দেওয়া ভাল। এটি গোপন রাখার চেষ্টা করেও খুব লাভ হবে বলে মনে হয় না। টুকি কেশে গলা পরিষ্কার করে বলল, এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমরা আসলে বিজ্ঞানী রিচি আর ফ্রাউল নই। আমার নাম হচ্ছে টুকি আর এ হচ্ছে ঝা।

বিদ্রোহী দলের নেতা হা হা করে হেসে উঠে বলল, আমি ঠিক এরকম একটা উত্তরের জন্যে অপেক্ষা করছিলাম মহামান্য অস্ত্রবিজ্ঞানী রিচি এবং ফ্রাউল। এর আগেরবার আমরা যখন গ্যালাক্টিক এম্বেসডরকে ধরেছিলাম তিনিও প্রথমে কিছুতেই স্বীকার করতে চাচ্ছিলেন না। শেষে আমরা যখন একটা একটা করে তার নাকের লোম ছিড়তে শুরু করলাম–

নাকের নোম?

হ্যাঁ! তখন সব স্বীকার করে ফেললেন। আপনারা অবশ্যি জ্ঞানী মানুষ, আপনাদের উপর নিচু স্তরের অত্যাচার করতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু দরকার পড়লে আর কী করব?

টুকি মাথা নেড়ে বলল, কিন্তু আসলে আমরা সত্যিই বিজ্ঞানী নই।

খুব যেন একটা মজার কথা শুনেছে সেরকম ভান করে বিদ্রোহী দলের নেতা জিজ্ঞেস করল, তাহলে আপনারা কী?

আমরা আসলে চোর।

চোর? হা হা হা–দলপতির সাথে অন্য সবাই এবারে উচ্চস্বরে হা হা করে হাসতে শুরু করে এবং টুকি আর ঝা হঠাৎ করে খুব অস্বস্তি বোধ করতে থাকে। দলপতি এক সময় হাসি থামিয়ে বলল, আপনারা সত্যি সত্যি জীবন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ ব্যক্তি। মিথ্যা কথাটি কেমন করে বলতে হয় তার বিন্দু বিসর্গও জানেন না। মিথ্যা কথা বলতে হয় সত্যের খুব কাছাকাছি করে। আপনাদের বলা উচিত ছিল যে আপনারা ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার কিংবা শিল্পীসাহিত্যিক। তা না বলে আপনারা বললেন চোর!

টুকি মুখ শক্ত করে বলল, আমরা সত্যিই চোর।

দলপতি তার চোখে কৌতুকের হাসি ধরে রেখে বলল, তার কোন প্রমাণ আছে?

আছে। আমরা শেষবার যেটা চুরি করেছি সেটা আমাদের কাছেই আছে।

দেখি, কী চুরি করেছেন।

টুকি তার কোমর থেকে খুলে হীরার ঝোলাটি দলপতির দিকে এগিয়ে দিল। সে ভিতরে এক নজর তাকিয়ে একটা বড় সাইজের হীরা বের করে এনে আবার উচ্চস্বরে হাসতে থাকে। অন্য সবাই যারা কাছাকাছি ছিল এবারে তারাও হাসতে শুরু করল। টুকি এবং ঝা প্রথমবারের মত পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে গেল, হীরা চুরি করার মাঝে কোন অংশটি হাসির কে জানে। দলপতি কোনমতে হাসি থামিয়ে চোখ মুছে বলল, আপনারা চুরি করার আর জিনিস পেলেন না? হীরা চুরি করলেন?

কী হয় হীরা চুরি করলে?

খুব বড় রকমের গাধামো হয়। মাটি থেকেই যখন দশ কেজি বিশ কেজি সাইজের হীরা তুলে নেওয়া যায় তখন যদি কেউ এইটুকুন হীরা দেখিয়ে বলে সে সেটা চুরি করে এনেছে তখন শুনতে কেমন লাগে?

টুকি আর ঝা কিছুই বুঝতে পারল না, খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। দলপতি বলল, এই পুরো গ্রহটা হীরার তৈরি। এই যে আপনি মেঝের উপরে দাঁড়িয়ে আছেন সেটা হীরার, দেওয়ালটা হীরার, এই গ্রহের ছাদ হীরার, বাইরের পাহাড়টা হীরার! দুই বিলিয়ন বছর আগে এই গ্রহের কার্বন-কোর বাইরের পাথরের চাপে হীরা হয়ে গেছে। তারপর গত এক বিলিয়ন বছরে বাইরের পাথর ক্ষয়ে গিয়ে ভিতরের হীরা বের হয়ে এসেছে। এখানে কেউ হীরা চুরি করে না।

টুকি এবং ঝা নিচে তাকাল। সত্যি সত্যি তারা স্বচ্ছ কিছুর উপর দাঁড়িয়ে আছে, চারিদিকে সেই একই স্বচ্ছ দেওয়াল, স্বচ্ছ ঘরের ছাদ। চারিদিকে এত হীরা আর তারা কী না এই অল্প কয়টা হীরা চুরি করার জন্যে জীবন পণ করেছিল? টুকি এবং বার হঠাৎ নিজেদের বোকার মত মনে হতে থাকে।

দলপতি হাসি হাসি মুখে বলল, আপনারা কী এখনো দাবি করবেন যে আপনারা চোর, নাকি সত্যি কথাটি বলে দেবেন বিজ্ঞানী রিচি এবং ফ্রাউল।

টুকি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, সত্যি কথাটাই হচ্ছে আমরা চোর।

বেশ। তাই যদি মনে করেন তাহলে তাই হোক। দলপতির চোখমুখ হঠাৎ কেমন জানি থমথমে হয়ে যায়, গম্ভীর গলায় বলে, যদি আপনারা সেই বিখ্যাত খ্যাতিমান অস্ত্রবিজ্ঞানী না হয়ে থাকেন, আপনাদেরকে আমার কোন প্রয়োজন নেই।

ঝা এক গাল হেসে বলল, তাহলে আমরা যেতে পারি?

উহুঁ। দলপতি মাথা নেড়ে বলল, আমি বলেছি আপনাদের প্রয়োজন নেই। কিন্তু আপনাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রয়োজন নেই সেটা তো বলি নি। ফেডারেশানের সাথে আমাদের বার বছর থেকে যুদ্ধ চলছে। আমাদের লোকজন আহত হচ্ছে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট হচ্ছে—আমাদের তাজা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দরকার। আপনাদের কিডনি, লিভার, প্যাংক্ৰিয়াস, ইন্টেস্টাইন, হার্ট, লাংস, আংগুল, হাত, পা, চোখ, কান দরকার।

ঝা মুখ হা করে বলল, সবই তো দরকার। তাহলে বাকি থাকল কী?

একজন হি হি করে হেসে বলল, চুল।

টাক মাথা একজন এগিয়ে এসে বলল, আমার চুলও দরকার।

তার কথা শেষ হবার আগেই একজন মানুষ ন্যাংচাতে ন্যাংচাতে এগিয়ে এসে বলল, স্কাউটশীপ যুদ্ধে আমার ডান পাটা গেছে। আমি শুকনো মানুষটার পাটা চাই।

চোখে ব্যান্ডেজ বাঁধা একজন এগিয়ে এসে বলল, আমি একটা চোখ চাই।

বুক থেকে কিছু টিউব বের হয়ে একটা যন্ত্রের সাথে লাগানো আছে সেরকম একজন বলল, আমাকে একটা হার্ট দিলেই চলবে।

আগুনে পোড়া ঝলসে যাওয়া একজন মানুষ চেঁচিয়ে বলল, আমার দরকার চামড়া। মোটাটার চামড়া, ভাল ইলাস্টিক মনে হচ্ছে।

দেখতে দেখতে অসংখ্য কানা, খোড়া, পোড়া, কাটা, ফাটা, ঝলসানো মানুষ। টুকি এবং ঝাকে ঘিরে ফেলল। তারা সবাই টুকি এবং ঝায়ের শরীরের কিছু না কিছু চাচ্ছে।

দলপতি হাত তুলে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল, তোমাদের যা প্রয়োজন সব পাবে। অস্ত্রোপাচারকারী রবোটকে ডাক, নিয়ে যাক এক্ষুনি। কাটাকুটি করে ভাগাভাগি করে নাও, যাও।

দলপতির কথা শেষ করে উঠে দাঁড়ানোর সাথে সাথে মানুষগুলো আনন্দে চিৎকার করে উঠে টুকি এবং ঝাকে খামচা খামচি করতে থাকে। সবাই মিলে যখন দুজনকে ধরে টানাটানি করছে ঠিক তখন তারা হঠাৎ করে সত্যিকার বিপদটা টের পেল। প্রথমে টুকি নিজেকে সামলে নিয়ে গলা উঁচিয়ে বলল, আমরা আসলে বিজ্ঞানী রিচি আর ফ্রাউল। এতক্ষণ মিছে কথা বলছিলাম।

কানা খোড়া এবং ঝলসানো মানুষ তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সরবরাহ হাতছাড়া হয়ে যাবে ভেবে টুকির কথাকে চাপা দিয়ে হৈ হুঁল্লোর করে টানাটানি করতে থাকে। টুকির সাথে গলা মিলিয়ে ঝাও তখন গলা উঁচিয়ে বলল, আমরা অস্ত্র বিজ্ঞানী। অস্ত্রবিজ্ঞানী।

বিদ্রোহী দলপতি আবার হাত তুলে সবাইকে থামিয়ে ভুরু কুচকে বলল, আপনারা অস্ত্রবিজ্ঞানী?

জী।

এতক্ষণ তাহলে নিজেদের চোর বলে দাবি করছিলেন কেন?

টুকি থতমত খেয়ে বলল, অত্যন্ত গোপন প্রজেক্টে যাচ্ছিলাম, আমাদের উপরে খুব কড়া নির্দেশ ছিল যে কিছুতেই সত্যিকারের পরিচয় দেয়া যাবে না।

দলপতি শক্ত মুখে বলল, কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী আমার মনে হয় আপনারা প্রথমে সত্যি কথা বলেছিলেন এখন মিথ্যা কথা বলছেন। আসলেই আপনারা চোর। আপনাদের চেহারায় একটা চোর ছ্যাচড়ের ভাব আছে। বিশেষ করে এই যে মোটাটা, একে দেখে একটা গর্দভের মত মনে হয়।

অন্য সময় হলে ঝা নিঃসন্দেহে অপমানিত বোধ করত কিন্তু এখন করল না। আমতা আমতা করে বলল, মানুষের চেহারার উপর নিজের হাত নেই। যে জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ার আমার চেহারার ডিজাইন করেছে, সেই ব্যাটা বদমাইশ নেশা করে।

দলপতি মাথা নেড়ে বলল, আমি ওসব কথা শুনতে চাই না। আপনারা যে বিজ্ঞানী তার কোন প্রমাণ আছে?

উপস্থিত কানা খোড়া কাটা ফাটা এবং ঝলসানো মানুষেরা সমস্বরে চিৎকার করে বলল, নাই। নাই।

টুকি চিঁ চিঁ করে বলল, মহাকাশযানের লগ পরীক্ষা করে দেখেন, সেখানে আমরা ছাড়া আর কে থাকবে?

দলপতি বলল, ঠিক আছে, আজ রাতে আমরা ফেডারেশানের একটা দলকে আক্রমণ করব। যুদ্ধ চলাকালীন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আপনাদের দুজনের। আপনারা সত্যিকারের অস্ত্রবিজ্ঞানী কী না তখনই প্রমাণ হয়ে যাবে।

টুকি ফ্যাকাসে মুখে বলল, আমাদের কী করতে হবে?

মেগা কম্পিউটারে সিস্টেমস কন্ট্রোল করতে হবে। ভয়েস কমান্ড দিয়ে সুপার মাইজার চালাতে হবে, স্কাউটশীপ স্কোয়াড্রনকে ট্র্যাক করতে হবে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন সবকিছু।

টুকি জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, জানি। জানি। করতে পারবেন তো সবকিছু?। টুকি চিঁ চিঁ করে বলল, পারব। একশবার পারব। ঝা মাথা নেড়ে বলল, সোজা কাজ। একেবারে পানির মত সোজা।

রোবি এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল, কী সুন্দর মিথ্যা কথা বলছেন আপনারা মুগ্ধ হয়ে গেছি দেখে। মানুষ কী সুন্দর মিথ্যা কথা বলতে–

দলপতি জিজ্ঞেস করলো, কী বলছে এই ব্যাটা রবোট?

ইয়ে বলছে বলছে আপনাদের দলটি খুব দুর্ধর্ষ!

দলপতি মৃদু হেসে বলল, এখনই দুর্ধর্ষ বলছে—যখন আমাদের যুদ্ধ করতে দেখবে তখন কী বলবে?

টুকি কিছু না বলে দুর্বল ভাবে হাসল। দলপতি তার দলের একজনকে ডেকে বলল, জেনারেল কাওয়াগাতা এই দুজনকে কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যাও।

মুখের অর্ধেক উড়ে গেছে এরকম একজন মানুষ এগিয়ে এসে বলল, চলুন বিজ্ঞানী রিচি আর বিজ্ঞানী ফ্রাউল।

টুকি ফ্যাকাসে মুখে বলল, চলুন।


দলপতির সুদৃশ্য ঘরটিতে নরম আরামদায়ক চেয়ারে টুকি এবং ঝ হেলান দিয়ে বসে আছে। সামনে কালো গ্রানাইটের টেবিল, তার অন্য পাশে বিদ্রোহীদের দলপতি, পাশে কয়েকজন বিশ্বাসী জেনারেল। সবার সামনে পানীয় এবং খাবার। দলপতি পানীয়ের একটা গ্লাস হাতে নিয়ে বলল, আমাদের মহান অতিথিদের উদ্দেশ্যে। ফেডারেশানের সবচেয়ে বড় যুদ্ধে আমাদের জয়ী করিয়ে দেয়ায় তাদের অভূতপূর্ব কৃতিত্বের জন্যে।

সবাই বলল, অভূতপূর্ব কৃতিত্বের জন্যে।

পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিয়ে জেনারেল কাওয়াগাতা বলল, আমি যদি নিজের চোখে না দেখতাম তাহলে বিশ্বাস করতাম না। এটি ছিল আমার দেখা সবচেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী যুদ্ধ।

ছোট ছোট চুলের একজন জেনারেল মাথা নেড়ে বলল, সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী। মূল কম্পিউটারে কোন তথ্য না দিয়ে আমাদের এই মহামান্য মোটা বিজ্ঞানী সেখানে একটা লাথি দিলেন। তার গোদা পায়ের লাথি খেয়ে মাল্টিপ্রসেসর খুলে পুরো সিস্টেম রিসেট হয়ে গেল। সে কারণে শত্রুদের মহাকাশযান আমাদের প্রধান ঘাঁটির খোঁজ পেল না। কেউ কী চিন্তা করতে পারে একটা বড় ধরনের যুদ্ধ হচ্ছে মূল কম্পিউটারকে অচল রেখে?

বুড়োমত একজন জেনারেল বলল, যখন ভয়েস কমান্ড ব্যবহার করার কথা তখন সেখানে কণ্ঠস্বরে কোন আদেশ না দিয়ে বিজ্ঞানী রিচি এবং ফ্ৰাউল মানুষ যেভাবে ডাক ছেড়ে কেঁদে উঠে ঠিক সেরকম শব্দ করতে শুরু করলেন। তখন পুরো ভয়েস কমান্ড সিস্টেম ধসে পড়ল। আর ঠিক তখন কন্ট্রোল মনিটরে একটা ঘুষি দিলেন, কী অপূর্ব সময়জ্ঞান! সাথে সাথে স্কাউটশীপ থেকে দুইটা মিসাইল বের হয়ে এল। নিখুত নিশানায় গিয়ে আঘাত করল ফেডারেশনের যুদ্ধ জাহাজকে।

জেনারেল কাওয়াগাতা বলল, কী-বোর্ডে কোন তথ্য না দিয়ে সেখানে ক্রমাগত থাবড়া দিতে লাগলেন। আপাতঃদৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল অর্থহীন কাজ। কিন্তু সেটা অর্থহীন নয় সেই থাবড়া খেয়ে কম্পিউটার জ্যাম হয়ে গিয়ে তিনটা নিউক্লিয়ার বোমা ছেড়ে দিল!

আমাদের এক স্কোয়াড্রন স্কাউটশীপ যখন উড়ে যাচ্ছিল তখন কন্ট্রোল রুম থেকে সাহায্য চাইল। কো-অর্ডিনেট না বলে তাদেরকে বললেন গোল্লায় যাও। তার অর্থ বৃত্তাকারে ঘুরতে থাক। বৃত্তাকারে ঘুরতে ঘুরতে মূল মহাকাশযানকে আওতার মাঝে পেয়ে গেল।

আর মাইজার কন্ট্রোলের ঘটনাটা–

দলপতি হাত তুলে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল, এই দুই মহান বিজ্ঞানীর কথা বলে শেষ করা যাবে বলে মনে হয় না। তার চেষ্টা করে লাভ নেই। আমাদের মস্তবড় সৌভাগ্য তারা যুদ্ধ পরিচালনায় আমাদেরকে সহযোগিতা করতে রাজী হয়েছিলেন। আমি তাদেরকে অবিশ্বাস করেছিলাম সে জন্যে ক্ষমা চাইছি।

টুকি এবং ঝা মৃদু হেসে ক্ষমা করে দেবার ভঙ্গী করল।

জেনারেল কাওয়াগাতা গম্ভীর মুখে বলল, বিজ্ঞানী রিচি এবং ফ্রাউলের কাছে থেকে আমাদের পুরো যুদ্ধ পরিচালনার নিয়ম-কানুন শিখে নিতে হবে।

দলপতি হঠাৎ সোজা হয়ে বসে বলল, আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে।

সবই দলপতির দিকে ঘুরে তাকাল কী আইডিয়া?

আমাদের য়ুতে মাত্র দুইজন অস্ত্রবিজ্ঞানী রিচি এবং ফ্ৰাউল থাকার কারণেই অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। বিদ্রোহী দল হিসেবে আমাদের সবসময় যুদ্ধ করতে হয়। যদি দুজন না হয়ে দুইশ অস্ত্রবিজ্ঞানী হত? কিংবা দুই হাজার? কিংবা আরো বেশি?

বুড়োমত জেনারেল চোখ বড় বড় করে বলল, আপনি কী বলতে চাইছেন?

আমি এই বিজ্ঞানী রিচি এবং ফ্রাউলের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে তাদের বিদ্যাবুদ্ধি দক্ষতা আমাদের সকল সদস্যদের মাথায় বসিয়ে দিতে চাই। তারা সবাই যেন বিজ্ঞানী রিচি এবং ফ্রাউলের মত ভাবতে পারে, চিন্তা করতে পারে।

উপস্থিত জেনারেলরা টেবিলে থাবা দিয়ে বলল, চমক্কার বুদ্ধি! চমৎকার আইডিয়া!!

টুকি এবং ঝায়ের চোয়াল স্কুলে পড়ল, খানিকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, সবাই আমাদের দুজনের মত হয়ে যাবে?

হ্যাঁ! আমরা গত যুদ্ধে মস্তিষ্ক স্ক্যানের এই যন্ত্রটি দখল করেছি। এটা ব্যবহার করে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব, জ্ঞান, বুদ্ধি আরেকজন মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। আপনাদের জ্ঞান বুদ্ধি চিন্তাধারা ব্যক্তিত্ব সব আরেকজনের মাথায় নিয়ে যাব। যারা শুকনো পাতলা তারা পাবে বিজ্ঞানী রিচির মস্তিষ্ক যারা মোটা তারা পাবে বিজ্ঞানী ফ্রাউলের মস্তিষ্ক।

টুকি এবং ঝা খানিকক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে বিড় বিড় করে বলল, সবাই?

হ্যাঁ! আমি ছাড়া সবাই। প্রথমে জেনারেলেরা তারপর সিনিয়র সদস্যরা। তারপর সাধারণ সদস্যরা। দেরী করে লাভ নেই, এখন থেকেই শুরু করে দেয়া যাক।

দুই সপ্তাহ পরে যখন টুকি এবং ঝা তাদের মহাকাশযান বোঝাই করে এই গ্রহের প্রস্তর খণ্ড নিয়ে—যাকে সাধারণভাবে হীরা বলা হয়—মহাকাশের উদ্দেশ্যে। রওনা দিল তখন বিদায় জানানোর জন্যে মহাকাশ স্টেশনে এই গ্রহের প্রায় সবাই এসে ভীড় জমিয়েছিল। ঠিক বিদায়ের সময় এই গ্রহের সব অধিবাসীরা কেন মুচকি হেসে টুকি এবং ঝায়ের দিকে চোখ টিপে দিল বিদ্রোহী দলের দলপতি সেটা কিছুতেই বুঝতে পারল না। শুধু তাই নয়, যে দুর্ধর্ষ দলটিকে পুরো এম। সেভেন্টিওয়ান নক্ষত্রপুঞ্জের ত্রাস হিসেবে বিবেচনা করা হত তারা ঠিক কী কারণে যুদ্ধ বিগ্রহ ছেড়ে দিয়ে নিরীহ ছিচকে চোর হয়ে গেল, বিদ্রোহী দলের দলপতি সেই রহস্যটিও কোনদিন ভেদ করতে পারল না।

COMMENTS

Name

Andrew-Kishore,1,অগ্নিপুরুষ,10,অনীশ,2,অন্য-ভুবন,3,আজ-হিমুর-বিয়ে,3,আবু-ইসহাক,1,আমি-এবং-আমরা,3,আমিই-মিসির-আলি,3,উপন্যাস,15,উপেন্দ্রকিশোর-রায়চৌধুরী,2,একজন-হিমু-কয়েকটি-ঝিঁঝিঁ-পোকা,5,এবং-হিমু,5,কবিতা,2,কহেন-কবি-কালিদাস,2,কাজী-আনোয়ার-হোসেন,18,কাজী-নজরুল-ইসলাম,2,গজল,1,গল্প,3,গানের-লিরিক,9,চলে-যায়-বসন্তের-দিন,3,চোখ,1,ছোট-গল্প,35,ছোটদের-গল্প,17,জলের-গান,1,জেমস,2,তন্দ্রাবিলাস,3,তোমাদের-এই-নগরে,4,দক্ষিণারঞ্জন-মিত্র-মজুমদার,1,দরজার-ওপাশে,4,দেবী,7,দেশাত্ববোধক-কবিতা,1,দেশাত্ববোধক-গান,2,নিশীথিনী,4,নিষাদ,3,পঞ্চতন্ত্র,1,পাগলা-দাশু,4,পারাপার,4,পুফি,3,বইয়ের-তালিকা,1,বাঘবন্দি,3,বিখ্যাত-গান,3,বিপদ,2,বৃহন্নলা,2,ভয়,5,মজার-গল্প,23,ময়ূরাক্ষী,4,ময়ূরাক্ষীর-তীরে-প্রথম-হিমু,1,মাসুদ-রানা,18,মিসির-আলি-UNSOLVED,4,মিসির-আলি-আপনি-কোথায়,3,মিসির-আলি-সমগ্র,55,মিসির-আলির-অমিমাংসিত-রহস্য,3,মিসির-আলির-চশমা,3,মুহম্মদ-জাফর-ইকবাল,1,মোশতাক-আহমেদ,1,মোহাম্মাদ-জসীম-উদ্দীন-মোল্লা,2,যখন-নামিবে-আঁধার,2,রবীন্দ্রনাথ-ঠাকুর,3,রম্যগল্প,4,রাধারানী-দেবী,1,রুপকথার-গল্প,4,শরৎচন্দ্র-চট্টোপাধ্যায়,2,শেখ-আবদুল-হাকীম,8,শ্রী-ক্ষিতীশচন্দ্র-কুশারী,1,সায়েন্স-ফিকশন,1,সুকুমার-রায়,7,সে-আসে-ধীরে,4,সেবা-প্রকাশনী,4,সৈয়দ-মুজতবা-আলী,1,স্বর্ণদ্বীপ,7,হরতন-ইশকাপন,2,হলুদ-হিমু-কালো-RAB,6,হাসির-গল্প,23,হিমু-এবং-একটি-রাশিয়ান-পরী,3,হিমু-এবং-হার্ভার্ড-PhD-বল্টু-ভাই,7,হিমু-মামা,6,হিমু-রিমান্ডে,9,হিমু-সমগ্র,80,হিমুর-দ্বিতীয়-প্রহর,3,হিমুর-বাবার-কথামালা,8,হুমায়ূন-আহমেদ,135,
ltr
item
গল্প এর বই: টুকি ও ঝায়ের (প্রায়) দুঃসাহসিক অভিযান - মুহম্মদ জাফর ইকবাল
টুকি ও ঝায়ের (প্রায়) দুঃসাহসিক অভিযান - মুহম্মদ জাফর ইকবাল
টুকি এবং ঝা দুজনকে মিলিয়ে মোটামুটিভাবে একজন পুরো মানুষ তৈরি করা যায়। টুকি শুকনো কাঠির মতন, তার শরীরে মেদ বা চর্বি দূরে থাকুক প্রয়োজনীয় মাংসটুকুও নেই,
গল্প এর বই
https://golpoerboi.blogspot.com/2021/08/Tuki-ebong-jayer-dusahosik-ovijan.html
https://golpoerboi.blogspot.com/
https://golpoerboi.blogspot.com/
https://golpoerboi.blogspot.com/2021/08/Tuki-ebong-jayer-dusahosik-ovijan.html
true
2280349116972597382
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content